বর্তমানে রাজনীতির মাঠে দুই বড় দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার পতনের পর উভয়দলের শীর্ষনেতারা বিপরীতমুখী বক্তব্য দিলেও সম্প্রতি বক্তব্যের ধরন ও সুর বদলেছে তাদের। কারণ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে টানাপোড়েনের মধ্যেই রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রেখে এগোতে চাইছে দল দুটি। বিশেষ করে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কারও সঙ্গে বিরোধে না গিয়ে ঐক্য ধরে রাখতে চাইছে দল দুটি। সম্প্রতি উভয় দলের নেতাদের বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। সভায় নেতারা বলেছে, জামায়াতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আর একইদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য প্রয়োজনে ছোটখাটো বিষয়ে টানাটানি বন্ধ করতে হবে।
জামায়াতের সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই জামায়াত একটি দল। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিরোধের প্রশ্ন আসবে কেন? অনেক নেতা বক্তব্য দিতে পারেন, অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার হয় না, আমরা আমাদের মতো করে পলিটিক্স করছি। মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় তো দিতেই হবে।
অপরদিকে বিএনপির সঙ্গে মত-পার্থক্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব বা টানাপোড়েন নেই। যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যা তারাই দেবেন।
তিনি আরও বলেন, এবার আমাদের ঐক্যের প্রয়োজন। এজন্য আল্লাহর ওয়াস্তে সবার দিল বড় করে আসুন। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে টানাটানি বন্ধ করুন। আমাদের মনের ঐক্য যেদিন হবে, সেদিন আল্লাহ আমাদের মধ্যে বারাকা দেবেন। শুধু ঠোঁটের ঐক্য হলে আল্লাহ বারাকা দেবেন না।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো ভুল দেখলে সেই ভুল ধরিয়ে সোজা করে দেবেন। আপনারা যদি এভাবে মেহেরবান করেন, তাহলে আল্লাহর মেহেরবানিতে দ্বিনের পথে চলাটা আমাদের সহজ হবে।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত দুই ধরণের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে অভিমত দেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। এছাড়াও জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন তারা।