চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার আদুরপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সংঘটিত এই ঘটনায় নিহত হন আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬), যিনি সরোয়ার হোসেনের অনুসারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত তাহসীন একই এলাকার হাজীরপুলের দিলা মিস্ত্রির বাড়ির মো. মুসার ছেলে।
দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসাইন ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৯) এবং সরোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জেরে সোমবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে গুলিবিদ্ধ হন আফতাব উদ্দিন তাহসীন। আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান বলেন, “সাজ্জাদ এবং সরোয়ার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত তাহসান সরোয়ার গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
শিবির ক্যাডার থেকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদের উত্থান
চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খানের ভূমিকা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। ২০০০ সালের ১ অক্টোবর একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হওয়া সাজ্জাদ জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৪ সালে বিদেশে পালিয়ে যান। বিদেশে অবস্থান করেও চট্টগ্রামের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, এবং হাটহাজারী এলাকাগুলোতে তার প্রভাব অটুট থাকে। তার নির্দেশনায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, এবং জমি দখল অব্যাহত রয়েছে।
শিবিরের ক্যাডার হিসেবে তার অতীত সংযোগ এবং পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরে সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার শঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন এবং সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার ভূমিকা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। সরোয়ার পরবর্তীতে সাজ্জাদকে ছেড়ে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হন, যা নতুন সংঘর্ষের জন্ম দিয়েছে।
নগরজুড়ে চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি
সাজ্জাদ ও তার অনুসারী ছোট সাজ্জাদ বর্তমানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ছোট সাজ্জাদ। সম্প্রতি বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে থাকা সত্ত্বেও সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের মন্তব্য
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, “সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।”
শিবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পড়ার এই উদাহরণ উদ্বেগজনক। নগরবাসী এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।