কেউ কি কখনো জানার চেষ্টা করেছে আসলেই জনগণ কি চায়?

‘২৪ এর গণঅভ্যূথান কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর মানুষ জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষ তার মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আর সেই অধিকার ফিরে পাবার আকাঙ্খাই মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করেছে আর বাংলাদেশের মানুষ তারই একটি রূপ দেখেছে গত ৫ই আগস্ট । সুতরাং সাংবিধান হোক, ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে চুড়ান্তভাবে কবর দিতে হোক বা অন্য যেটাই হোক, সিদ্ধান্ত হতে হবে জনগণের মাধ্যমে।

গত ১৫ বছর ধরে শুনেছি জনগণ এইটা চায়-ওইটা চায় আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সেই স্বপ্নই পূরণ করতেই পুরো বাংলাদেশটাকেই পরিণত করেছিলেন কারাগারে। মানুষ চেতনা বিক্রির সেই রাজনীতির অবসানের আশা করেছিল ৫ই আগস্টের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। তবে মানুষের সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে সময় লাগেনি।

কেউ কেউ লেগে পরে ‘৭১ এর চেতনা’র কবর রচনা করে ‘২৪’র চেতনা’ প্রতিষ্ঠায়। ‘চেতনা’ বিক্রির ইজারাদারের ভূমিকায় নামে একটি গ্রূপ। চেতনা বিক্রির সেই রাজনীতিই ঠিক আগের মতোই দেশটাকে করে ফেলে বিভক্ত। ৫ই আগস্টের পূর্ববর্তী আর পরবর্তীতে ছাত্রদের সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতায় দেখা মেলে ব্যাপক বৈপরীত্ব। যেখানে ৫ই আগস্টের আগে তারা একের পর এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে চমকে দিতে সমর্থ হয়, সেখানে পরবর্তীতে তারা নিতে থাকে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত – নিজেদেরকে করে ফেলে অনেকটাই বিতর্কিত। মূলত মেরুদন্ডহীন সুবিধাবাদী একটি গোষ্ঠীর বুদ্ধি-বিবেচনায় পথ চলতে গিয়েই অনেকটাই পথ হারায় তারা।

আজ বিএনপি বলবে জনগণ এইটা চায় – ঐটা চায়, আবার জামায়াত “জানাক” এর মাধ্যমে বলবে না জনগণ চায় অন্য কিছু , আবার ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলোও তাদের কর্মকান্ডকে চালিয়ে দেবে জনগণের নামে।

যতদূর মনে পরে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা করা হয় বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৮ দফা আর ৯ দফা। এর পরবর্তীতে ঘোষণা করা হয় হাসিনা পতনের এর দফা। তাদের কোনো দফার মধ্যেই খুঁজে পাইনি সংবিধানের দাফন সংক্রান্ত কোনো কথাবার্তা আবার পেলেন না ‘৭১ কে অস্বীকার করার মতো কোনো বক্তব্য। আবার সেই সময়ের বিএনপি’র বিভিন্ন নেতাদের কথাবার্তাও খুঁজে দেখলাম , সেখানেও পেলাম না সংবিধান সমুন্নত রাখার কোনো প্রত্যয়। আর আজ একদলের দাবি সংবিধানের দাফন আর ‘৭১ কে ছুড়ে ফেলাই নাকি জনগণের দাবি , সেই দাবিতেই নাকি গণ অভ্যুথান। আবার অন্য পক্ষের দাবি, সংবিধান সমুন্নত রাখাই নাকি জনগণের দাবি আর ‘৭১ এর চেতনাই নাকি জনগণের স্বপ্ন পূরণের পথ।

এদের কেউ কি কখনো জানার চেষ্টা করেছে আসলেই জনগণ কি চায়? তাই জনগণ আসলেই কি চায় তা জানার পথ খুঁজে বের করতে হবে, সেটা হতে পারে গণভোটের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো পন্থায় ল এর বাইরে কোনো গোষ্ঠী, দল বা কোনো গ্রুপের কিছু করার সুযোগ থাকা উচিত না। তাহলে প্রতিবারের মতো এবারও পথ হারাবে বাংলাদেশ, প্রতারিত হবে জনগণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *