জনপ্রশাসনে অসন্তোষ : সর্ষের ভুত আলী ইমাম মজুমদার

সচিবালয়ে নজিরবিহীন অসন্তোষ, হট্টগোল আর হাতাহাতির ঘটনার পর টনক নড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। ৫৯ ডিসি নিয়োগ ঘোষণার পর তুমুল বিতর্কের মুখে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেই আদেশ আবার আংশিক বাতিল করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ক্লান হয়। যাদের পদায়ন করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট এমন ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইতিমধ্যেই আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। রদবদল করা হয়েছে কয়েকজনের কর্মস্থল। বাতিল করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ডিসিদের বৈঠক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বাকিদের বিষয়েও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের নানা রকম আশ্বাসেও অসন্তোষ নিরসনের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপনই বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তবে এবারই প্রথম নয়, গত একমাসে জনপ্রশাসনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েও দেখা দেয় নানা বিতর্ক। এমনকি পরিবর্তন করা হয় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত।

মাসখানেক ধরে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে ফিটলিস্ট তৈরির পরও ডিসি পদে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা কী করে নিয়োগ পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনপ্রশাসনে।

এবিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির পেছনে সরকারের একজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই মূলত দায়ী। পদোন্নতি বিষয়ে সব সিদ্ধান্তই আসে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের কাছ থেকেই। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি, বিগত সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া এবং সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করছেন আলী ইমাম মজুমদার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, ডিসি নিয়োগের জন্য ব্যাপক যাচাই-বাছাই করে ফিটলিস্ট তৈরি করা হলেও শেষ পর্যস্ত সেই সুপারিশ আর কার্যকর থাকেনি। এই পুরো প্রক্রিয়ার কলকাঠি নেড়েছেন আলী ইমাম মজুমদার। এর আগেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিগত সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠে এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে।

আলী ইমাম মজুমদারকে, যেদিন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের উপদেষ্টা করা হয়েছে, সেদিনই অনেকেই তার এই নিয়োগ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। কার পরামর্শে এই নিয়োগ দেওয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন অনেকে।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনেই মেধাবী ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানে শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়ান আলী ইমাম মজুমদার। শুধু তা-ই নয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিযুক্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনদের সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল তার। আওয়ামী লীগ আমলে সাজানো প্রশাসনে কোনো ধরনের পরিবর্তনে সম্মত ছিলেন না তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত নানা চাপের কারণে কয়েকদিন পর এসব পদে রদবদল আনা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *