জামায়াতে ইসলামী নামক দলটা গঠিত হয় ১৯৪১ সালে । গত ৮৩ বছরে তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস শুধুই ভুলে ভরা। দলের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদূদী বলেছিলেন “গণতন্ত্র বিষাক্ত দুধের মাখনের মত” আর “গণতন্ত্রএর মাধ্যমে কোনো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ইসলাম অনুযায়ী হারাম” – সেই থেকেই শুরু। মূলের সেই ভুল থেকে আর কোনোদিনই বেরিয়ে আসতে পারেনি দলটি। জন্মের শুরুতে দলটির নাম ছিল, “জামায়াতে ইসলামী হিন্দ”। মূলত ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট বিরোধী শক্তি হিসেবে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদীদের আশ্রয়ে এই দলটির জন্ম। বগলের তলায় থাকার রাজনীতির শুরু সেখান থেকেই। কখনো বগলের তলায়, আবার কখনো শাড়ির আঁচলে লুকিয়েই চলতে থাকে তাদের রাজনীতি। জন্মের সাথে সাথে এরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধীতা করতে থাকে । মওদূদী ফতোয়া দেন পাকিস্তান রাষ্ট প্রতিষ্ঠার দাবী করা (মুসলীম লীগ, জিন্নাহ) এরা কেউই “খাটি মুসলিম” না। সেই থেকেই তাদের ভুলের শুরু। এরপর ‘৭১ সালেও তারা বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান , ‘৭১ এর গণ হ -ত্যা- র সময়ও “খাটি মুসলিম” তত্ব ব্যাবহার করে জামায়াত। সেই ভুলের খেসারত আজ দিয়ে চলেছে দলটি। তবে ‘৭১ এর ভুলের জন্য কখনো ক্ষমা প্রার্থনা না করলেও থেমে থাকেনি তাদের ভুলের পাল্লা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আবারো ভুল দিয়েই পথ চলা শুরু করে দলটি। ১৯৭৮ -৮৪ পিরিয়ডে আইডিএল কে ভেঙে গোলাম আজমের জামায়াত এডাপ্ট করে শুরু হয় সেই ভুল| ‘৯১ তে বিএনপি’র ছায়াতলে গিয়ে ক্ষমতার কিঞ্চিৎ স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হলেও সেই বিএনপি’র পিঠেই ছুরি মারতে কুন্ঠাবোধ করেনি দলটি। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো করেই ‘৯৫ -‘৯৬ তে হাসিনার সাথে করে আঁতাত। অবশ্য এই আঁতাতের পিছনে তাদের ‘৭১ এর ভূমিকাই অনেকটা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করেন অনেকেই। ‘৭১ এর গণ- হ- ত্যা- র দায় থেকে কিছুটা মুক্তি পেতেই আওয়ামী লীগের ছায়া তলে ঠাঁই নেয় জামায়াত। বিএনপি’র পিঠে ছুরি মারার সেই খেসারত আজ জামায়াতকে বহন করতে হচ্ছে।
২০০১-০৬ এ বিএনপি’র শাসনামলে আবারো বিএনপি’র বগলে ঠাঁই নিলেও ‘৭১ সালের ভূমিকার জন্য তাদের গায়ের গন্ধ থেকে কখনোই মুক্তি পায়নি দলটি। আর এর খেসারত খুব বাজে ভাবেই দিতে হয় জামায়াতকে।
এবার আবারও ভুল পথে ২০২৪ এ এসে। দেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখা মানুষ গুলো যারা ১৯৭১ কে প্রায় ভুলতে বসেছিল , আওয়ামীলীগের চেতনা বিক্রির জন্য ছিল ক্ষুব্ধ , চেতনা বিক্রির রাজীনীতিতে ত্যাক্ত-বিরক্ত সেই জনতার কাছেই আবার ২৪’র চেতনা বিক্রির চেষ্টায় মত্ত হয় জামায়াত। ২৪’র জামায়াত ব্র্যান্ড দেশের গলা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা জামায়াত শুধু নিজেই ডুবছে না সেই সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ ভাগে থাকা কিছু নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিকেও ডুবানোর ব্যবস্থা করেছে।
জানাক যতই জামায়াত সিম্প্যাথি দেখাবে – ততই এরা নিজেকে মার্জিনাইলাজ ফ্রিঞ্জ পার্টি বানিয়ে ফেলবে!
অনেকেই আশা ছিল জানক আওয়ামী লীগের ভ্যাকুয়াম পূরণ করবে। দেশে প্রয়োজনেই বিএনপিকে চেক এন্ড ব্যালেন্স রাখার জন্যও এই ভ্যাকুয়াম পূরণ খুবই জরুরি ছিল। তবে জানাক জামাতের পেটে ঢুকলে সেটার সম্ভাবনা আর থাকবে না বললেই চলে। জানাক জামাতের পেটে ঢুকলে অংকুরেই সেই আশা বিলীন হয়ে যাবে। আবার নানা মতের – নানা পথের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতাদের নেতৃত্বে আর কোনো দল গঠন ঠিক কতটা ফলপ্রসূ হবে তা সময়ই বলে দিবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যদি শক্তিশালী সেন্টার বা সেন্টার লেফট (বাংলাদেশ ফার্স্ট) ইলেক্টোরাল চ্যালেঞ্জার না থাকে সেটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না লং-টার্মে। এখন জানাক যদি জামাতে ইসলামির মতো সেনসিটিভ রিজেক্টেড পার্টি নিয়ে পলিটিক্স করতে চায় – তবে দেশের মানুষের সেই আশায় গুড়ে বালি।
নিজেদের মতো রাজনীতি করলে জানাক হয়তো অনেক এডভাইজার/সিম্পেথাইজারকে পাশে পেত – জামায়াত শিবিরের সাথে পার্টনারশিপ এর কারণে জানাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হারাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হারাতে থাকবে।
জানাক কে পরিষ্কার করতে হবে তারা কারা? বামপন্থী? মধ্য-বামপন্থী? মধ্যপন্থী? না ডানপন্থী? আজ জানাক যদি সেন্টার-লেফট রাজনীতি করে তবে তারা আওয়ামী ভোট টানতে পারবে, মধ্য-বামপন্থী বা মধ্যপন্থী হলে কিছু আনডিসাইডেড ভোট টানতে পারবে, আর ডানপন্থী খুবই ছোট অংশ এবং তারা মোস্টলি অলরেডি ডিসাইডেড। ডানপন্থী হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে জানাক এক সময় পুরোপুরিই জামায়াতে বিলীন হয়ে জামায়াতের মতোই কারো না কারো বগলের তলার রাজনীতিই করে যেতে হবে।