জুলাই আন্দোলনের “প্রক্লেমেশন অব রেভুলেশন”

বাচ্চা প্রসবের পাঁচ মাস পর ধাত্রী ডাকা হচ্ছে বাচ্চা প্রসব করানোর জন্য। বাচ্চা প্রসব সম্পন্ন হলেও ধাত্রী ডেকে প্রক্লেমেশন অব রেভুলুশন যে ঘোষণা হচ্ছে সে জন্যও বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ।

তবে ৩৬শে জুলাইতে যা হওয়ার কথা ছিল তা ৩১শে ডিসেম্বরে হলে যে যে বিপত্তি ঘটতে পারে সে বিষয়ে ধাত্রীর কতটুকু ধারণা আছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

প্রথম বিপত্তি হচ্ছে জনগণ ! যে আম-জনতা ৩৬শে জুলাই রাস্তায় নেমে এসেছিল তাদের কতজন “প্রক্লেমেশন অব রেভুলুশন” কি তা জানেন ? তারা কি সত্যিই এই ক্ষমতার কামড়াকামড়ির ভাগিদার হতে রাস্তায় নেমেছিল নাকি নিজের ভাতের অধিকার- ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফ্যাসিস্ট তাড়াইতে রাস্তায় নেমেছিল ? এই ভাতের অধিকার- ভোটের অধিকারে নামা বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে এই প্রক্লেমেশনের কি মূল্য তা কি কেউ জানেন?

দ্বিতীয় বিপত্তি হচ্ছে জনসমর্থন। ৩৬শে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা ছাত্র নেতাদের যে জনসমর্থন ছিল তা এখনও আছে কিনা একটা বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকায় অন্তর্বর্তী সকারের ব্যর্থতার দায়ভার তাদের উপরও বর্তায়। অন্তত দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষদের একটা বড় অংশ যে সেটাই মনে করে। বিশেষ করে এলাকায় এলাকায় তাদের ঔদ্ধত্য বিস্তারের চেষ্টার পর তাদের জনসমর্থন এখন ঠিক কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

তৃতীয় বিপত্তি হচ্ছে অন্যান্য শক্তির অনীহা। জুলাইয়ের আন্দোলনে ছিল অনেক গুলো পক্ষ। তাদের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় জানাতে তাদের পথ এক হয়ে যায়। সেই অন্য সব পক্ষকে বাইরে রেখে শুধুমাত্র ছাত্রদের এক পক্ষের ঘোষণা দেওয়া এই প্রক্লমেশন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয় ।

চতুর্থ বিপত্তি হচ্ছে রাষ্ট্র বা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটাকে গ্রহণ করবে কিনা সে প্রশ্ন। বিশেষ করে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিটির কর্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে এই প্রক্লেমেশন ঠিক কি ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

সব পক্ষকে সাথে নিয়ে সকলের মতবাদকে মূল্য দিয়ে যদি এই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করা হতো তাহলে তার গ্রহণ যোগ্যতা থাকতো। এককভাবে ঘোষিত এই প্রক্লেমেশন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে বা জাতির জন্য ঠিক কতটুকু পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসবে তা সময়ই বলে দিবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *