ইতিহাসের সবচেয়ে চরম বিপর্যয় অতিক্রম করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। গণহত্যার অভিযোগে পালিয়ে গেছেন দলের সিনিয়র নেতারাও। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের নেতারাও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরই মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে হরতালের ডাক দিয়েছেন নিজেকে এখন বৈধ প্রধানমন্ত্রী দাবী করা শেখ হাসিনা। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও আওয়ামী লীগের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতারা দেশে থাকা নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। কিন্তু নেতাদের কথায় খুব একটা সাড়া মিলছে না। এমনকি সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভারতে অবস্থান করা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও ভার্চুয়াল বৈঠকে হরতাল সফল করতে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশেও মাঠে নামার মতো দুঃসাহস করছেন না আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
কলকাতায় অবস্থান করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের তৃণমূলের এক নেতা বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকটা ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে। দলের নেতাদের অনেকেই পালিয়ে দেশ ছেড়েছেন। যারা দেশে আছেন তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন, বাকিরাও প্রকাশ্যে আসার সাহস পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় হরতালের মতো কর্মসূচির ডাক দেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্ষুব্ধ।
আরেক নেতা বলেন, ‘যারা দলকে অন্যায়-অপকর্ম করে ডুবিয়েছেন তারা তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তারা বিদেশে বসে বসে এখন হরতালের মতো কর্মসূচি দিচ্ছেন। এতে আমাদের ওপর ধরপাকড় আরও বেড়ে গেছে। আমরা এই কর্মসূচির কারণে নতুন করে বিপদে পড়েছি।’ তার মতে আওয়ামী লীগের এখনই রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা সময় আসেনি। এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
টানা প্রায় চার মেয়াদ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধ তারা কঠোরভাবে মোকাবেলা করেছে। তবে শত কঠোরতা সত্ত্বেও তখনকার বিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধের পক্ষে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের সেটাও দেখা যাচ্ছে না। জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী দলটির পক্ষে রাজনীতিতে ফেরা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে আওয়ামী লীগের কথিত হরতাল ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গতকালই নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। তাদের হরতালে কিছুই হবে না।
আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজে ডাকা হরতাল নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি আছে। পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে আছে। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কোনো কিছুতে নগরবাসী আতঙ্কিত হবেন না। খারাপ কোনো কিছু ঘটবে না।
সাজ্জাত আলী বলেন, ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ হরতালের ডাক দিয়েছে। আমরা পুরো রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অতীতেও তারা (আওয়ামী লীগ) ফেসবুকে এমন প্রোগ্রাম দিয়েছে, আমরা তা মোকাবেলাও করেছি।