নূরের মতো তারকারাই ছিলেন শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার শীর্ষস্থানীয় সহায়ক শক্তি

আমি আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ের বিশাল ভক্ত ছিলাম। তাঁর অভিনয়ে একধরনের নির্লিপ্ততা ছিল। কিন্তু এএফপির সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় আমি তার উপর থেকে বিশ্বাস হারাই। এএফপির সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময়ই তিন মেয়ে নিয়ে বিধবা এক মা জানিয়েছিলেন, তার স্বামীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার পেছনে নূরের হাত ছিল। এই হত্যার বিচারের আশায় গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী শাহনাজ ‘মায়ের ডাক’ এর একাধিক প্রতিবাদে অংশও নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নূরের গাড়ি বহরের ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় বিএনপি কর্মী রাব্বানী সহ আরও বেশ কয়েকজন বিএনপি-জামায়াত কর্মীকে ।

সেসময়ের খবরে প্রকাশ, সেই সময় নীলফামারীর গ্রামের বাজারে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল
আরো চারজন আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে এর কয়েকদিন পরেই অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন বিএনপি’র কর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হন আর আরেকজন শিবির কর্মী হন গুম । আর অন্য এক জামায়াত সদস্য নূরের গাড়ি বহরে চাপা পড়ে নিহত হন । গাড়ি বহরের ওপর হামলার জন্য অভিযুক্তদের সহজেই গ্রেপ্তার এবং বিচার করার পথে না হেটে তাদের সবচেয়ে নির্মমভাবে ধরে ধরে হত্যা করা হয়।

আমি জানি, অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেন না যে এমন একজন অভিনেতা, যার এত উচ্চমার্গীয় রুচি এবং যিনি একজন মহান কবিতা আবৃত্তিকার, তিনি এমন ক্রসফায়ার হত্যার আদেশ দেবেন। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, নূর এবং অন্যান্য বেশ কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বই ছিলেন শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার শীর্ষস্থানীয় সহায়ক শক্তি আর এদের উপর ভোর করেই স্বৈরাচারের আইকনে পরিণত হন শেখ হাসিনা। এই সব তারকারাই ঐ ফ্যাসিস্ট সরকারের লুণ্ঠন ও সহিংসতাকে একধরনের সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক বৈধতা প্রদান করেছিলেন।

আমি নিশ্চিত, নূর সুবিচার পাবেন, সঠিক তদন্ত এবং সঠিক বিচার পাবেন — যা থেকে শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্র তার ১৫ বছরের শাসনামলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বঞ্চিত করেছিল।

  • শফিকুল আলম, এএফপি সাবেক ব্যুরো চিফ
    (অনূদিত)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *