বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা করেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে “ভুয়া” বলে আখ্যায়িত করেন এবং অভিযোগ করেন যে বৈশ্বিক মহলে তার দুর্নীতি নিয়ে যথাযথ প্রশ্ন তোলা হয়নি।

ড. ইউনূস বলেন, “দাভোসে শেখ হাসিনা সবাইকে শেখাচ্ছিলেন কীভাবে একটি দেশ পরিচালিত হওয়া উচিত। কেউই এ নিয়ে প্রশ্ন করেনি। এটি মোটেই একটি আদর্শ বিশ্ব ব্যবস্থা নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রবৃদ্ধির হার সবার চেয়ে বেশি দাবি করা হলেও এটি পুরোপুরি মিথ্যা।”

রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। তার শাসনামলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পসহ অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এই প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক ২০২৩ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, ড. ইউনূস এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, “আমি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দিয়েই জীবনমানের উন্নতির বিচার করতে চাই না। আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ প্রত্যেক নাগরিকের জন্য উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করা। এজন্য আমি এমন অর্থনীতি চাই যেখানে সম্পদের পুঞ্জীভবন এড়িয়ে চলা হয়।”

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না, যদি বাংলাদেশের মানচিত্র সেখানে না থাকে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বর্তমান সময়ে চীন বাংলাদেশের “দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু” হলেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের এই অবস্থা তাকে ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট দেয়।

ড. ইউনূসের এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *