ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশন গঠন হচ্ছে না। বিডিআর হত্যা নিয়ে দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকায় আপাতত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
গত রোববার সকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
সরকারের এই ঘোষণার পরেই নানা মহল থেকে জানানো হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেক অনলাইন এক্টিভিস্টকেই এনিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের উপর চড়াও হতে দেখা যায়। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠনে সরকারের গড়িমসির কারণে দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নেয়া হয়েছে, এমন মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আইন উপদেষ্টা কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনীএরো ঘোষণা দেন। তার এই কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি মাহিনের পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, “আমি আমার ভাই মাহিনের পক্ষে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে। #আইএমউইথমাহিন।”
এমন বিতর্কের মধ্যেই রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর আজকের একটি বক্তব্য নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সম্প্রতি দায়ের করা রিট মামলায় হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই মর্মে ৩ ডিসেম্বর মতামত দেয়। অর্থাৎ উক্ত কমিটি গঠনের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেয়।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে (বা এর নামে প্রচারিত একটি স্মারকে) আপাতত এই কমিটি গঠন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো মতামতের উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান এ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয় এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানান আসিফ নজরুল।
এর আগে বিডিআর হত্যার পুরো ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিডিআর হত্যার পুনঃতদন্তদের দাবি ওঠে।
নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করতে পিলখানায় শহীদ সেনা সদস্যের পরিবার ও দণ্ড হওয়া বিডিআর সদস্যদের পরিবারও পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও পুনঃতদন্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুইদিনে তৎকালীন বিডিআর বর্তমানে বিজিবি সদরদফতর পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে।