ভাইরাল কোলাজে বিভ্রান্তি: চার নারী মুক্তিযোদ্ধা নন, ছবির ইতিহাস অন্যকিছু

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি কোলাজ ছবিতে দাবি করা হয়, চার বাংলাদেশি নারী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের সময় বন্দুক হাতে এবং গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসে একটি ছবি তুলেছিলেন এবং পরবর্তীতে সেই ছবির পুনর্নির্মাণ করেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোলাজের সাদাকালো ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নয় বরং ১৯৬১ সালের। অনুরূপভাবে রঙিন ছবিটিও ২০১৭ সালে তোলা হয়। ফেসবুকে যেটি ২০২১ সালের বলে প্রচার করা হচ্ছে, সেটিও ভিত্তিহীন।

ছবির প্রকৃত ইতিহাস

সাদাকালো ছবিটি তোলেন মানিকগঞ্জের জাহাজ ব্যবসায়ী শামসুদ্দীন আহমেদ। ষাটের দশকে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিকারে যেতেন। শিকারের সময় বা শিকার শেষে পরিবারের সদস্যদের বন্দুকসহ খোলা জিপে বসিয়ে এই ছবিটি তোলা হয়। ছবিতে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা নারী হলেন শামসুদ্দীনের মেয়ে আয়েশা রহমান। তার পাশেই বসা ছেলের বউ রোকেয়া আহমেদ। পেছনে থাকা বাকি দুই নারী শাহানারা আহমেদ এবং রাশিদা আহমেদ, তারাও ছেলের বউ।

রোকেয়া ও রাশিদা বর্তমানে মারা গেছেন। আয়েশা বর্তমানে লন্ডনে থাকেন এবং শাহানারা বাংলাদেশে বসবাস করছেন।

কোলাজ ছবির ভুল প্রচারণা

২০১৭ সালে এই সাদাকালো ছবির আদলে নতুন একটি রঙিন ছবি তোলেন শামসুদ্দীনের পরিবার। তবে এটি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ভাইরাল হওয়া ছবি এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

বিভ্রান্তির ফলাফল

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃতি ঘটায় না, বরং মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান দেখানোর শামিল।

আসুন, ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবময় অধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যেকোনো তথ্য যাচাই-বাছাই করেই প্রচার করি।

Show Comments