হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এফবিআই লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস এবং এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর এফবিআই-এর একটি প্রতিনিধিদল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদর দপ্তরে মানি লন্ডারিং অ্যান্ড লিগ্যাল ইউনিটের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ বৈঠকে বিপুল পরিমাণ দলিল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ১ অক্টোবর ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মাইকেল ক্রেজারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাচার হওয়া তহবিল ফেরত আনা এবং কমিশনের পরিচালন সক্ষমতা বাড়াতে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

দুদকের তদন্ত
শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এসব অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকের বিশেষ তদন্ত শাখায় পাঠানো হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন ১৭ ডিসেম্বর জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯টি অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা, এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ৭০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগের পৃথক অনুসন্ধান চলছে।

বেপজা ও বেজা প্রকল্পে দুর্নীতি
৭০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেপজা ও বেজার আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের নাম জড়িত
ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অস্ত্র সরবরাহের চুক্তির মধ্যস্থতায় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর
এফবিআইয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং লন্ডনের ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বিস্তারিত জানানো হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতি
সম্প্রতি প্রকাশিত এক শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ বার্ষিক গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার ও দুর্নীতির কারণে হারিয়েছে।

প্রতিবেদন: গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *