জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলন আগস্টের শুরুতে রূপ নিচ্ছিল অভ্যুত্থানে। বাড়ছিল মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের সমর্থনে মাঠে নেমে আসেন সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা। মিছিল নিয়ে ২ আগস্ট মিরপুর ডিওএইচএসের পুরো এলাকা প্রদক্ষিণ করেন তারা। পরে ডিওএইচএসের কালচারাল সেন্টারের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সামরিক বাহিনীর কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রতি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি না চালানোর আহ্বান জানানো হয়।
এর পরদিন ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক দরবার ডাকেন। সেখানে সেনা কর্মকর্তারা আন্দোলনরতদের ওপর গুলি না চালানোর মনোভাব প্রকাশ করেন। পরদিন ৪ আগস্ট রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা। সেখানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না।’
এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন সকালেও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সমর্থনে সপরিবারে মানববন্ধন করেছিলেন। ২ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিবাদী উদ্যোগগুলোর কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ৪ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে যাননি। ওই সময়ও বিগত দেড় দশকের মতো নীরবতাই বজায় রেখেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদের কোর্সমেট এবং এক-এগারোর সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) দায়িত্ব পালনকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তাকে দীর্ঘ ১৫ বছরের নীরবতা ভেঙে প্রথম জনসম্মুখে আসতে দেখা যায় গত ১৬ আগস্ট। সেদিনই অন্তর্বর্তী সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার এ দায়িত্ব গ্রহণের পর সময় অতিবাহিত হয়েছে এক মাসের বেশি।
৪ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দুজন অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। পরে তাকে সে পদ থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। আর তার স্থলাভিষিক্ত হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সাবেক এ সামরিক কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের বেসামাল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি গত এক মাসে তেমন একটা দেখা যায়নি। এখনো শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থানাগুলো থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের বড় একটি অংশ উদ্ধার হয়নি। খোয়া যাওয়া গোলাবারুদের অর্ধেকের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাফিক পুলিশ কাজে ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু সড়কের বিশৃঙ্খলা আরো বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময় গণপিটুনিতে কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যে কিছু ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দাদের ব্যর্থতায় ঘটেছে বলে মনে করছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। ২০০৫-০৬ মেয়াদে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল কাইয়ুম। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তার অভিমত জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের সংঘর্ষ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা না করতে পারাটা ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা। এ জায়গায় খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে পুরনোদের বাদ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে নতুন পেশাদার লোকদের রাখতে হবে। পুলিশের ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে হবে। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভালোভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তা খুবই দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। আশা করি এ সরকারের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’
এ মুহূর্তে পুলিশসহ আরো অনেক জায়গায় দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি। আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘পুলিশের বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বিগত সরকারের লোকজন এখনো নানা জায়গায় রয়েছে। প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান। বিগত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীর অবস্থা ভঙ্গুর করে দেয়া হয়েছে। তাদের জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। এখন তাদের সে অবস্থা ও নৈতিকতার দিক থেকে উত্তরণ ঘটানো দ্রুত প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু জায়গায় কাজ করলেও বেশকিছু পরিবর্তনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও এর দায়িত্বশীলরা এখনো পুলিশকে জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপনের মতো কার্যকর কোনো সংস্কার করতে পারেনি। এ মুহূর্তে জনসাধারণ পুলিশ বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে জনসাধারণের আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অন্যান্য প্রতিহিংসাও মব জাস্টিসের রূপে চরিতার্থ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ তোফাজ্জল বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শামীম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মাসুদের হত্যাকাণ্ড এরই উদাহরণ। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে প্রকৃত অর্থেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় করে তুলতে হবে।
সাবেক আইজিপি (২০০৬-০৭ মেয়াদে) খোদা বখস চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে পত্রিকা মারফতে যত খবর পেয়েছি এতে সন্তোষজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে আমি মনে করি না। উপদেষ্টা থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা কেউই এ পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। উদ্ভূত এ পরিস্থিতির বড় একটি কারণ হলো পুলিশ ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এ দুটি ক্ষেত্রে সমন্বয় হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে এ পরিস্থিতি উত্তরণ ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
প্রসঙ্গত, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীসহ সারা দেশে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়। ওইদিন থেকে পরবর্তী দুই মাস (৬০ দিন) এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নীরবতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ইস্যুতে। সম্প্রতি বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন সে সময় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদ।
৫ সেপ্টেম্বর দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনী থেকে করা তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি তার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি, কারণ অনেকে জেলে ছিল। অনেককে প্রশ্ন করা সম্ভব হয়নি। সেনাবাহিনীর তদন্ত চলাকালে জেনারেল জাহাঙ্গীর কয়েকবার আমার কাছে এসে বেশ কয়েকবার তার সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন।’
ওই ভিডিও বার্তায় মইন ইউ আহমেদ বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে পুনরায় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘তিনি এ তদন্ত কমিটি পুনর্গঠিত করে জড়িতদের বের করতে সক্ষম হবেন। আমি সরকার গঠনের পর তাকে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছি।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি তুলছেন ওই ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তা পরিবার, সেনাসদস্যসহ নানা মহলের লোকজন। একই সঙ্গে ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশেরও দাবি তুলছেন তারা।
গত ২৫ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালে বিদ্রোহ হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনাসদস্যদের স্বজনরা। মূল দোষীদের বাদ দিয়ে এ ঘটনার বিচারকার্য সম্পাদন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
এ বিষয়ে শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিডিআর সদস্যদের অপরাধী করে একটি তদন্ত সাজানো হয়েছে। মূল কুশীলবদের বাদ দিয়ে পিলখানায় যারা সদস্য ছিল তাদেরকে কেন্দ্র করে একটি নাটক সাজানো হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাহারা খাতুনরা জড়িত ছিলেন। তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর তদন্ত রিপোর্টও তো কয়েকবার করে ঘষামাজা করে একটি আংশিক অংশ তুলে ধরা হয়েছে।’
তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে বিডিআরের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটি সংকুচিত করা হয়েছে। এর একাংশ প্রকাশিত হয়েছে। এখানে তদন্ত সঠিক হয়নি। বিচারকার্যও সঠিক হয়নি। তাই এখন আমরা সঠিক তদন্তের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বহুল আলোচিত এক-এগারোর সময়েও জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তার কোর্সমেট লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে মইন ইউ আহমেদ তার ‘শান্তির স্বপ্নে’ বইয়ে লিখেছেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও জাতিসংঘের মনোভাব নিয়ে আমি নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানের সঙ্গেও কথা বললাম। তারাও সবাই একমত হলো, রাষ্ট্রে এ পরিস্থিতি মহামান্য প্রেসিডেন্টকে অবগত করে তার দিকনির্দেশনা চাওয়া প্রয়োজন। ঠিক হলো আমরা তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও (তৎকালীন মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী) এবং ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার বারী (ডিজি, ডিজিএফআই তখন একটি সরকারি সফরে বিদেশে অবস্থান করছিলেন) একসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলব।… বঙ্গভবনে মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সব বিষয়ে আলাপ হলো।… দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে প্রেসিডেন্ট এক সময় সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে মত দিলেন।’
এক-এগারোর সময় তৎকালীন সেনাপ্রধানের ভূমিকা নিয়ে পরে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান সমাধানের তৎকালীন সেনাপ্রধান নুরুদ্দীন খান দরবার ডেকে সেনাসদস্যদের মতামত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। যার জন্য সমস্যাটি সংকটে পরিণত হয়নি। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও বর্তমান সেনাপ্রধান দরবার ডেকে সবার মতামত নিয়ে সংকটের সমাধান করেছেন। কিন্তু মইন ইউ আহমেদ সেদিন কোনো দরবার না ডেকেই কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সংকট সমাধানে রাষ্ট্রপতির কাছে সরাসরি চলে যান।
সেদিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সামরিক সচিব ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমিনুল করিম ভূঁইয়া। সেদিনের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর মূল কুশীলব ছিলেন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ। সে সময় মইন ইউ আহমেদ মার্শাল ল জারি করতে চেয়েছেন। কিন্তু ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে তখন সশস্ত্র বাহিনীর পিএসও তৎকালীন মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন এবং মার্শাল ল জারি করতে নিষেধ করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ আহমেদ আমাকে এ বিষয়টি বলেন। সশস্ত্র বাহিনীর পিএসও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ছিলেন মইন ইউ আহমেদের কোর্সমেট। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল দুজনের মধ্যে। মূলত তারা দুজন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী এক-এগারোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আনুমানিক বেলা দেড়টায় বঙ্গভবনে যান মইন ইউ আহমেদসহ তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর পিএসও মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং ডিজিএফআইয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারী। সে সময় মইন ইউ আহমেদরা রাষ্ট্রপতিকে জাতিসংঘের একটি চিঠি দেখান। যদিও সে পত্রটি ভুয়া ছিল। প্রায় ২ ঘণ্টা পর তারা ইয়াজউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর নিয়ে বের হন।’
সূত্র : বণিক বার্তা