মানুষের মৃত্যুর পর তার জন্য শেষ আশ্রয়ের জায়গা তৈরি করে যাওয়া এক নিঃস্বার্থ মানুষ, মনু মিয়া (Monu Mia), এবার নিজেই চিরঘুমে শায়িত হলেন। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগা পাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
মনু মিয়ার জীবন ছিল নিঃশব্দ অথচ গভীর মানবসেবার প্রতিচ্ছবি। ১৮ বছর বয়সে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করে একটানা ৪৯ বছর ধরে মানুষের জন্য খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর, বিনা পারিশ্রমিকে। এই কাজকে তিনি দেখতেন আত্মিক দায়িত্ব হিসেবে, মৃত্যুর পর একজন মানুষ যেন সম্মান নিয়ে শেষযাত্রা করতে পারেন—এটাই ছিল তার ব্রত।
জয়সিদ্দি ইউনিয়ন পরিষদ (Joysidddi Union Parishad) এর প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর জানিয়েছেন, মনু মিয়ার মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। যারা তাকে চিনতেন, তারা জানতেন এই মানুষটি কতটা নিঃস্বার্থ ছিলেন।
মনু মিয়ার গন্তব্য ছিল শুধুই মানুষ। কেউ মারা গেলে, সেটা যত দূরেই হোক, খবর পেলেই ছুটে যেতেন কবর খুঁড়তে। যাতায়াতের কষ্ট কমাতে নিজের ধানিজমি বিক্রি করে কিনেছিলেন একটি ঘোড়া, সেই ঘোড়ায় চড়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছে যেতেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, যিনি নিঃশব্দে কিন্তু নিরলসভাবে করে গেছেন কাজ। কোনো সংবাদে আসেননি, কোনো পুরস্কার পাননি, অথচ তার মতো নিঃস্বার্থ সেবক সমাজে বিরল।
জীবনের শেষ দিনটিতে তিনিও শেষ পর্যন্ত ফিরে গেলেন নিজের তৈরি করা সেই চেনা পথে—কবরে। তবে এবার আর কারও জন্য নয়, নিজের জন্য। সম্মানের সঙ্গে, নীরবেই বিদায় নিলেন তিনি।