জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা প্রক্রিয়ায় মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন আখতার হোসেন (Akhtar Hossain)। রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, বরং বিভাজন আরও প্রকট হয়েছে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, আলোচনা অনেক দীর্ঘ হলেও মূল সংকটগুলো রয়ে গেছে অমীমাংসিত। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি (BNP)-র আপত্তির কারণেই সাংবিধানিক পদের জন্য নির্ধারিত নিয়োগ কমিটি গঠিত হতে পারেনি। শুধু বিএনপিই নয়, তাদের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের কারণেই মৌলিক সংস্কার আটকে আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আখতার হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই, তবে এই প্রচেষ্টা কতটা নমনীয় হয়ে গেছে, সেটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। যেসব বিষয় মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে আলোচনায় এসেছে, সেগুলোর ওপর এখনও একমত হওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি ও তার মিত্ররা অনেক সময় কোড করে বা আনকোড করে দ্বিমত জানাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনার পরেও সিদ্ধান্ত আসছে না। হাউজ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে—এটা একটি ভয়াবহ সংকেত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন এক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে, বিকেন্দ্রীকরণ থাকবে। যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও প্রধানমন্ত্রীর একক নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাহলে এই ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অর্থ কী? আমরা তো এই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্যই লড়ছি।”
উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে গঠিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে এনসিপির অবস্থান পরিষ্কার করে আখতার হোসেন বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, উচ্চকক্ষ থাকবে সংবিধান সংশোধনের জন্য। শুধু নিম্নকক্ষে নয়, উচ্চকক্ষেও সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। কারণ সংবিধানে কিছু মৌলিক বিষয় আছে যেগুলোতে গা-ছাড়া মনোভাব চলতে পারে না।”
সাংবিধানিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং ঐকমত্যে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ বর্তমানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভবিষ্যত কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনসিপির মতে, এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও স্পষ্ট রূপরেখা—নয়তো এই আলোচনাও হবে অর্থহীন।