দীর্ঘ দশ মাসের রাজনৈতিক নীরবতা ভেঙে আচমকা মধ্যরাতে প্রকাশ্যে এসে আলোচনার কেন্দ্রে এলেন পতিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের (Awami League) সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader)। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তিনি অংশ নেন একটি জনপ্রিয় অনলাইন টকশোতে, যেখানে স্পষ্ট ও জোরালো ভাষায় তুলে ধরেন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাঁর দলের অবস্থান ও উদ্বেগ।
রাতের নির্জনে যখন দেশ ঘুমোচ্ছিল, তখন টকশোর আলোচনায় এক বিস্ফোরক মন্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোনও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তারা নিজেরাও আদৌ নির্বাচন দেবে—এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সন্ধিহান।”
এই বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট—বর্তমান রাজনৈতিক জোট এবং বিরোধী শক্তিগুলোর উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়েছে আওয়ামী লীগের। তাঁর মতে, “নির্বাচনের নাম আজকে তাদের যে অশুভ এলাইন্স, এ এলাইন্সকে নিয়ে তারা আজ সংস্কারের নাম গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।”
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে তীব্র রাজনৈতিক হতাশা ও ক্রোধের ছাপ ছিল স্পষ্ট। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক মঞ্চে বিরোধীরা সংস্কারের নামে যে ধরনের জোট গঠন করছে, তা আসলে গণতন্ত্রকে আরও বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করছে। তাঁর মতে, এই “অশুভ এলাইন্স” দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করছে।
অনলাইন টকশোতে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য আলোচকরা এই বক্তব্যের পর বেশ হতবাক প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর ওবায়দুল কাদেরের প্রকাশ্য উপস্থিতি এবং সরাসরি বক্তব্য আসন্ন রাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত বহন করে।
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ভেতরকার এক ধরনের চাপ বা কৌশলগত দোলাচলও এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। এতদিন পর দলের মুখপাত্র হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের সরব হওয়া এবং বিরোধীদের প্রতি এমন কড়া ভাষা ব্যবহার করা—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট এখন ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’। এই সংকট নিরসনের জন্য সব পক্ষের মধ্যে একটি ন্যূনতম বোঝাপড়া প্রয়োজন। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে যে ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে, তা আপস বা আলোচনার পথ আরও কঠিন করে তুলবে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এই আকস্মিক মধ্যরাতের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এতটুকু নিশ্চিত—দীর্ঘ নীরবতার পর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতার সরব উপস্থিতি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।