জুলাই বিপ্লব নিয়ে তৈরি প্রচারণা ও বিকৃতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা কখনোই ‘মব’ নয়, বরং তারাই ছিলেন মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধের শক্তি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটানো।
মাহফুজ আলম বলেন, “মব মানে বিপ্লবী উদ্দেশ্যহীন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা লালন করা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী। জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার—গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অতুল। তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত।”
তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দেশের প্রথম মব ভায়োলেন্স ঘটেছিল বিহারি জনগোষ্ঠীর উপর। তারপর মুজিববাদবিরোধী ছাত্র ও তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট করা হয়। এমনকি গত ৫৩ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরও অব্যাহতভাবে মব হামলা চালানো হয়েছে।
তথাকথিত ‘জনতার আদালত’, ‘জনতার মঞ্চ ৯৬’, ‘২৮শে অক্টোবর’ এবং ‘শাহবাগ আন্দোলন’—এসব ঘটনাকেও মাহফুজ আলম মব জাস্টিসের উদাহরণ হিসেবে দেখান। তিনি বলেন, “মবের ডেফিনিশন স্ট্রেইচ করলে এই ঘটনাগুলাও মব ভায়োলেন্সের মধ্যে পড়ে।”
তিনি সতর্ক করেন, সামাজিক ফ্যাসিবাদকে আলাদা করে দেখা যাবে না; এটি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী রাজনীতিরই প্রতিক্রিয়া ও বিকার। এ প্রেক্ষাপট না বুঝলে মব মানসিকতা মোকাবিলা অসম্ভব বলেই তার অভিমত।
মাহফুজ আলমের মতে, “ইসলামোফ্যাসিস্ট” বলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং জুলাই আন্দোলন যে ‘ক্রস-ইডিওলজি ডায়ালগ’-এর সুযোগ তৈরি করেছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের ভেতরের ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, “গত ১৬ বছরের গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের অবক্ষয়ই মব মানসিকতার জন্ম দিয়েছে। সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে—জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে, যারা রাজনৈতিক বা সামাজিক ফ্যাসিবাদের অংশ নয়, তাদের হঠাৎ করেই মব ভায়োলেন্সের দায় নিতে হচ্ছে।”
তার দাবি, যদি সত্যিই জুলাইয়ের পরে মব হতো, তাহলে এত ‘সুশীলতা’ বা ‘এপলজেটিক’ কথাবার্তা শোনা যেত না। বরং যে ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল বিপ্লব—আর সে বিপ্লবে কারও ক্ষতি নয়, বরং ক্ষমতাবানদের সুরক্ষাই প্রাধান্য পেয়েছে।
তিনি বলেন, “সাজানো স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরকেও ছাত্র-জনতা বাঁচিয়ে দিয়েছিল। এই স্ক্রিপ্টকে বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে করা হচ্ছে, কারণ বিপ্লবী ছাত্র-জনতা প্রতিশোধপরায়ণ ছিল না।”
জুলাইয়ের আন্দোলন যারা মব বলে অপমান করছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবে দেশকে আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করা মুক্তিকামী ছাত্র- জনতাকে মব বলে বিষোদগার করা বন্ধ করুন।”
তার পরামর্শ, “আইনের ব্যত্যয় ঘটলে, সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটলে আইনের আশ্রয় নিন। তবে মুজিববাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”
সবশেষে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কারবালা পার হইতে পারি নাই—এটাই সত্য।” তার ভাষায়, “জুলাই ও লড়াই সমার্থক।”