জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ (Mostofa Firoz) সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় বর্তমান মিডিয়া পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে যতটুকু স্বাধীনতা ছিল, এখন তা-ও নেই।’
আওয়ামী লীগের শাসনামলের তুলনামূলক বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার যদি সত্যিই গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হতো, তাহলে প্রথমেই একটি স্পষ্ট বার্তা দিত যে, কোনো টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করা হবে না, কোনো মিডিয়াকে হয়রানি করা হবে না। “আপনি তা করেননি,” সরাসরি অভিযোগ করেন তিনি।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘কোনো টেলিভিশন কী বলবে—বললে দেখা যাবে সামনে এসে ঘেরাও করে বসে আছে। আজকে একটা কথা বলি —পটিয়া থানা ঘেরাও করে রেখে দিছে। আট ঘণ্টা সেখানে মহাসড়ক বন্ধ হয়ে আছে। কারো কোন হুশ নাই। যখন-তখন লোক নিয়ে চলে আসতেছে। টেলিভিশনের যারা মালিক—তারা তো চিন্তা করে বারবার, আমার তো এইটা করতে প্রায় ৫০/৬০ কোটি টাকা গেছে। আমার এটার কি হবে, পরে তো এটার সূত্র ধরে আমার ব্যবসাটাও যাবে। সেই কারণে ওই টেলিভিশনগুলোতে দেখবেন একই সাবজেক্টের উপর একই মতাদর্শের ওপর চলছে।’
তিনি জানান, এখনকার টকশোগুলোর একটা মূল সংকট হলো—মতের বৈচিত্র্য অনুপস্থিত। একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা সবাই একমত। কেউ ভিন্নমত পোষণ করলে তাকে হয় আমন্ত্রণ জানানো হয় না বা সে নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় আসতে চায় না।
‘ভিন্ন মতের সাংবাদিক আসতে পারে না কেন? ইশতিয়াক রেজা আসতে পারে না কেন, জয় মামুনের উপর নিষেধাজ্ঞা কেন, আপনি বলেন কাগজে-কলম নেই। কিন্তু তাদেরকে ইনভাইট করা হয় না কেন—মারা গেছে তারা। ইকবাল সুবহান চৌধুরী কোথায় আছে, সবাই তো ঢাকায় আছে, মনজুরুল আহসান বুলবুল কোথায়, আসতে পারে না কেন? ফ্যাসিবাদর মামলাও হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ আমলেই তো বলতো এরা রাজাকার, রাজাকারের দোসর। তখন আসতো কি করে। আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্ন মতের লোক নিয়ে টকশো করতে হতো, এখন একই মতের লোক নিয়ে টকশো করতে হয়। তাহলে আওয়ামী লীগ আমলে যতটুক স্বাধীনতা ছিল এখন তাও নাই। আপনি কোনো টেলিভিশনের মালিক—আমি যে নামগুলি বললাম তাদেরকে ডাকার সাহস আছে, নেই। তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো যে এটা স্বাধীন। প্রায় টকশোগুলোতে দেখি সব একই কথা। একজনের সাথে একজন শুধু অ্যাড করে, কই একদম অপোজিট কথা তো বলে না। কিসের স্বাধীনতা।’
তিনি আরও বলেন, এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো শুধু সরকারের ভয়েই নয়, ‘মব’ বা দলীয় উগ্র সমর্থকদের ভয়েও কার্যত জিম্মি। ফলে অনুষ্ঠানগুলিতে আর খোলামেলা মতবিনিময়ের সুযোগ থাকছে না।
‘মবের ভয়ে, সরকারের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। এই কারণেই তো তার প্রতিফলন আমি বললাম তো টকশোতে তো দেখা যাচ্ছে, যে টকশোতে আমি সব মত দেখি না। আপনি ফ্যাসিফাদের দোসর বানাইছেন, তো ওরাও তো আমাকে বলেনি জামায়াত-বিএনপির দোসর। আমি আসছি না টকশোতে, আসতে পারছি। তো এখন ওরা পারে না কেন?’
মোস্তফা ফিরোজের এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সাংবাদিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে—গণমাধ্যম আদৌ কতটা স্বাধীন? মত প্রকাশের অধিকার কি শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ?