সাম্প্রতিক একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নাজমুল আহসান (Nazmul Ahsan)।তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই ধরনের নিষ্ঠুরতা কেবল ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নাকি মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ নাকি রাজনৈতিক শক্তির আশ্রয় ও প্রশ্রয়ের ইঙ্গিত ? তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কেবল বহিষ্কারেই সীমাবদ্ধ না থেকে আরো গভীর ও কাঠামোগত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন “দানবেরা” আর আশ্রয় না পায়। নিচে তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
আমরা বেশি ক্ষুব্ধ পাথর দিয়ে মারতে দেখে। এই ধরণের মৃত্যু কোনো মানব সন্তানের প্রাপ্য হতে পারে না। ইতিমধ্যে কি খুনিরা গ্রেপ্তার হয়েছে? তা-ই দেখলাম। কিন্তু আমরা শান্ত হইতে পারি নাই। রাতের অন্ধকারে বা আলো আবছায়ায় কেউ ঠুস্ করে গুলি মেরে চলে গেলে, সেটা সিসিটিভিতে আসলেও আমরা অতো ক্ষুদ্ধ হয়তো হতাম না।
শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের হাতে বিএনপির হরতাল চলাকালে নিহত বিশ্বজিৎ এবং যুবদলের সাধারণ পদপ্রার্থীর নেতৃত্বে ব্যবসা দখলের উদ্দেশ্যে যুবদলের এক কর্মী ও ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের মিল ওই এক জায়গাতেই: নৃশংসতা। এবং নৃশংসতাই পাবলিক সাইকিতে দীর্ঘমেয়াদে জায়গা করে নেয়।
পার্থক্যের জায়গা হলো: তৎকালীন ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির কাউকে ইনিয়ে বিনিয়ে হত্যাকাণ্ডকে জাস্টিফাই করতে দেখিনি। বিএনপি খুব দ্রুতই ওই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের বড় নেতাদেরও আজীবন বহিষ্কার করেছে। পুলিশ খুব দ্রুতই তাদের আটক করেছে। বিশ্বজিতের খুনিদের যে গ্রেপ্তার করা হয়নি, মালয়েশিয়ায় পালিয়ে থাকতে দেয়া হয়েছে; ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও দেশে ঘুরাফেরা করতে দেয়া হয়েছে; ফেসবুকে গৌরব করে পোস্ট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে — তেমনটা হয়তো ঘটবে না।
কিন্তু তারপরও মানুষ শান্ত হবে না। কারণ, এই হত্যাকাণ্ডটা খুবই আনইউজুয়াল। পাথর দিয়ে মারা তো রিস্কি, ইনেফিশিয়েন্ট ও ধরা পড়ার চান্স বেশি। তারপরও কেন খুনীরা সেটার সাহস পেলো? তা-ও প্রকাশ্যে দিবালোকে। এটা কি কেবল জেদের বশে, শত্রুতার জেরে, মানসিক সমস্যায়, নাকি দলের পাওয়ারে এম্বোল্ডেন্ড হয়ে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি।
আমরা শান্ত হতে চাই না, কারণ ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি যে ঘটবে না, সেটা আমরা জানি না। এই নিশ্চয়তা বা ভরসা মানুষ খোঁজে সমাজ ও দেশের নেতাদের কাছ থেকে। রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সরকারের নেতারা জেনুইনভাবে এই ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলে, সিন্সিয়ারলি এগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুললে, মানুষ ওই আস্থা পাবে না। মানুষকে কনভিন্সড হতে হবে যে এইসব বিষয় দমন করতে তারা সিরিয়াস।
একশন প্ল্যান দেন। আপনি কী পদক্ষেপ নিলেন বা নেবেন, কী ধরণের যাচাইবাছাইয়ের ব্যবস্থা ইনস্টিটিউট করবেন, যা থেকে রিজনেবলি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আপনার দল থেকে এই ধরণের দানব পয়দা হবে না বা দানবেরা আপনার দলে আশ্রয় পাবে না? এখন পর্যন্ত আমি বিএনপির কাছ থেকে এমন কিছু দেখি নাই। টু বি ফেয়ার, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দলের কাছ থেকেই সেটা দেখি নাই। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শুধু বহিষ্কারে এখন আর চিড়া ভিজবে না।