রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan) প্রাঙ্গণে শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) জাতীয় সমাবেশ ঘিরে দলটি চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া নিয়েছে। রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ঢাকায় আনতে এসব ট্রেন ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে এই ট্রেন ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— কিভাবে এবং কোন নিয়মে একটি রাজনৈতিক দল এভাবে ট্রেন ভাড়া পেল? কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, এতে রেলওয়ের নিরপেক্ষতা ও নিয়মনীতি লঙ্ঘিত হয়েছে।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হলে রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি ব্যাখ্যামূলক বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, “বিষয়টি কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চলছে। অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের ক্ষেত্রেও সে ধারা অনুসরণ করা হয়েছে।”
রেল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এতে ট্রেন পরিচালনার কোনো নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি। বরং এটি একটি “বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করা হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, জামায়াতে ইসলামী ৩২ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে ট্রেনগুলো ভাড়া নিয়েছে। এতে রেলের আয় বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

তবে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন, এই চার জোড়া ট্রেন ভাড়া করতেই জামায়াতের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যদিও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছ থেকে ৩২ লাখ নগদ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের (Bangladesh Railway) পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ (Farid Ahmed) বলেন, “পশ্চিমাঞ্চল থেকে দুটি ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া, সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য খরচ পরিশোধ করেই দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, কোনো রাজনৈতিক দল ট্রেন ভাড়া করতে চাইলে প্রথমে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। এরপর দেখা হয়, নির্ধারিত দিনে কোনো ট্রেন, ইঞ্জিন কিংবা রুট উপলব্ধ আছে কি না। মেকানিক্যাল ও অপারেশন বিভাগ অনুমোদন দিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ভাড়া নির্ধারণ সম্পর্কে ফরিদ আহমেদ বলেন, “এটা নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগ। সাধারণত আসন বা কোচের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হয়।”
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি মধুমতি এক্সপ্রেসের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবার ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শুক্রবার রাত ১টায় ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে এবং সমাবেশ শেষে শনিবার রাত সোয়া ৮টায় আবার রাজশাহীর পথে রওনা দেবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে চলার বদলে যমুনা সেতু হয়ে চলবে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, হরিয়ান ও সরদহ রোডে যাত্রাবিরতি করবে।
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে আরেকটি ট্রেন ছাড়বে শনিবার সকাল ৬টায় এবং সমাবেশ শেষে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ফিরতি যাত্রা করবে।
এই সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতারা। এটি হবে জামায়াতের প্রথম জাতীয় সমাবেশ, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।