বন্ধুর পার্টিতে তল্লাশি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সন্দেহে আটক ৩৯ কিশোর

ফেনীর ফুলগাজীতে প্রবাসে পাড়ি জমানোর আগে আয়োজিত এক বিদায়ী পার্টি ঘিরে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার মুন্সীরহাটের উত্তর আনন্দপুর ইব্রাহিম কনভেনশন হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও খাওয়াদাওয়ার আসরে যোগ দেওয়া ৩৯ কিশোরকে হঠাৎই আটক করা হয়। সন্দেহের তালিকায় ওঠে আসে ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ’–এর নাম। রাতভর জেরা ও যাচাই শেষে ভোরে তাদের পরিবারের জিম্মায় মুক্তি দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আনন্দপুরের বরকতউল্লাহ সমাজের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শাহজালালের ছেলে সাইমুন শাহ পাটোয়ারী ১৩ সেপ্টেম্বর জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিদায়ের আগে বন্ধুদের নিয়ে উত্তর আনন্দপুর ইব্রাহিম কনভেনশন হলে একসঙ্গে সময় কাটানোর আয়োজন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আনন্দঘন পরিবেশই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রূপ নেয় জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সূত্র জানায়, ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল মজুমদার গোলাপ (Golam Rasul Majumder Golap)-এর নেতৃত্বে কিছু লোক ওই কিশোরদের ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী’ আখ্যা দিয়ে পুলিশে খবর দেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ১২ থেকে ২২ বছর বয়সী কিশোরদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।

ঘটনার সময় কনভেনশন হলে ফেনী সদর, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া থেকে আসা কিশোররা উপস্থিত ছিল। রাতভর তল্লাশি ও জেরার পর ভোর সোয়া ৪টার দিকে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেন ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী (Ariful Islam Siddiqui), জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা ও ফুলগাজী থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফর রহমান (Mohammad Lutfor Rahman)। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এক কিশোরের অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বন্ধুর প্রবাস গমনের অনুষ্ঠানে আমার ছেলে অংশ নিতে গিয়েছিল। রাতে হঠাৎ খবর পাই, তাকে আটক করা হয়েছে। আমাদের সন্তানদের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও বিএনপি নেতা গোলাম রসুল গোলাপ বাড়াবাড়ি করে তাদের ছাত্রলীগ সাজিয়ে হয়রানি করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রসুল মজুমদার গোলাপ দাবি করেন, “ওই যুবকদের একজন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন ফেনীতে থাকলেও প্রবাসে যাওয়ার আগে এলাকায় এসে পার্টির আয়োজন করে। আমি শুধু প্রশাসনকে খবর দিয়েছি। কোনো আর্থিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ছিল না।”

অন্যদিকে ফুলগাজী থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফর রহমান জানান, “আটক কিশোরদের কারও বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ নেই। যাচাইয়ে দেখা গেছে, অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিল এবং তাদের অধিকাংশের পরিবার স্থানীয় বিএনপি সমর্থক। তাই ভোরে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *