জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় ভিন্ন ভিন্ন মত উঠে এসেছে। সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, স্পষ্ট জানিয়েছেন—সংবিধান সংশোধনের একমাত্র বৈধ পথ হলো সংসদ। তিনি মনে করেন, নির্বাহী আদেশ বা বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়, এতে সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “কমিশন সনদ বাস্তবায়নে চারটি পথ প্রস্তাব করেছে। এ নিয়ে লিখিত ও মৌখিক মতামত দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ১৯টি মৌলিক বিষয়কে সংবিধান সংশোধনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,“আমরা সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। এই সনদের প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ২৯টি রাজনৈতিক দল লিখিত মতামত দিয়েছে। নির্বাহী আদেশ, অধ্যাদেশ জারি, অফিস আদেশসহ মোটাদাগে ৬টি মতামত পাওয়া গেছে। কিছু বিষয়ে সামান্য ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়েছি, যেমন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের গঠনপ্রণালীতে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “সংবিধান সংশোধন অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। এ জন্য আমরা সংসদীয় পদ্ধতিতেই এগিয়ে যেতে চাই। নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশ দিয়ে সাংবিধানিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। ঐক্যমত্যভাবে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে সেগুলি বাস্তবায়ন করা হবে কিভাবে সেটা এখন আলোচনার বিষয়। তবে আমরা বলেছি। ’’

বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই গঠিত হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এমন কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ না নিতে সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের মতামত নিয়ে এই সরকার সংবিধান সংস্কার করলে ভবিষ্যতে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (Syed Abdullah Mohammad Taher) বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশ জারির ক্ষমতা রয়েছে। জামায়াতের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনজীবী শিশির মনির জানান, সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব এবং জনগণের অভিপ্রায়কে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, তাই বিশেষ আদেশের মাধ্যমে তা কার্যকর করাই যথার্থ হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন (Akhtar Hossain) আলোচনায় যোগ দিয়ে বলেছেন, নতুন সংবিধানের দাবি কোনো জটিল বিষয় নয়; এটি মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে ডিসেম্বরের মধ্যেই গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব। তবে তিনি কমিশনের ওপর কিছুটা গড়িমসির অভিযোগও তোলেন—সংস্কার প্রস্তাবে দৃঢ় থাকলেও বাস্তবায়নে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে বলে তার মন্তব্য।

আখতার হোসেন আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কমিশন দুটি ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা করেছে—একটি অংশে থাকবে ইতোমধ্যে অর্জিত ঐকমত্য, আরেকটিতে বাস্তবায়নের ধাপ। কিন্তু এই বিভাজন বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তার মতে, সংস্কারের ১৯টি বিষয় যেহেতু সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়নের একমাত্র পথ হলো নতুন সংবিধান প্রণয়ন। তিনি বিএনপি-জামায়াতসহ সব দলকে আহ্বান জানান—নতুন সংবিধানের দাবি তুলতে আর দেরি না করে শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *