জাকসু নির্বাচন বানচালের ছক চলছে, ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষক: শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী

শুক্রবার বিকেলে জাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম (Mazhharul Islam)। তিনি বলেন, এই বলবৎ চেষ্টা চলছে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সমর্থিত প্যানেলকে ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে — এবং সেই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষক।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে বৈঠকে এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও। মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বিকেল পাঁচটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। একদিন পেরিয়ে গেলেও পুরো ভোট গণনা হয়নি; এমনকি এক দিন পরও কেবল হল সংসদগুলোর কিছু ভোটই গণনা শেষ হয়েছে। কিন্তু জাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ভোট গণনা এখনো শুরুই হয়নি।’ তিনি এ ঘটনার জন্য সুস্পষ্টভাবে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের আগ থেকেই আমরা প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলাম—কোন জায়গায় লুপ হোল রয়েছে, কোথায় ষড়যন্ত্র হতে পারে, সেগুলো পরীক্ষা করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলেছি। আমাদের অধরা ইচ্ছা একটি ফেয়ার নির্বাচন—ছাত্ররা যাকে চান তাঁকে ভোট দেবেন; প্রশাসনও তাতে বাধা দেবেন না।’ মাজহারুল অভিযোগ করেন, ‘গতকাল নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার নমুনা দেখা গেছে—পোলিং এজেন্টের উপস্থিতি, অতিরিক্ত ব্যালট কাগজ, নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ না হওয়া; এসবই আমরা দেখেছি।’

তবে, তিনি যোগ করেন, এসবের চেয়েও বড় সমস্যা ছিল ছাত্রদলের আগ্রাসী কার্যক্রম এবং বাগছাসের ক্রমাগত ব্যাশিং ও মিথ্যাচার। সংবাদ সম্মেলনে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি (সাবেক শিক্ষার্থী) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে অবৈধভাবে অবস্থান নিয়ে আটক হন; তাদের এই কার্যকলাপ নির্বাচন বানচালের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে। ১৫ নম্বর হলে কিছু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের পক্ষে মব তৈরি করা হয়েছে, ফ্রেমিং করে দায় চাপানো হয়েছে ছাত্রশিবিরের ওপর—ফলে হলে হট্টগোল সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা হয়েছে। ২১ নম্বর হলে ও তাজউদ্দীন আহমদ হলে জোর করে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হয়েছে’—মাজহারুলের বক্তব্য এমনটি ছিল।

ওএমআর (OMR) পদ্ধতি থেকে ভোট গণনা নেয়ার বিষয়ে মাজহারুল বলেন, ‘ওএমআর যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটিকে ছাত্রদল ও বাগছাস জামায়াতপন্থী বলে ট্যাগ দিয়ে বাতিল করার চেষ্টা করেছে। যদি ওই যন্ত্র বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে, তা পরীক্ষা করার কথা ছিল; কিন্তু তার বদলে তারা সেটাকে রাজনৈতিক লেবেল দিয়ে উপেক্ষা করেছে। পরে আমরা খেয়াল করেছি ওই সিস্টেমটি জামায়াতঘনিষ্ঠ নয় বরং বিএনপিপন্থী কোনো সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত—এই দ্বন্দ্বই নির্বাচন পুরোপুরি ঝগড়ায় ঢেলে দিয়েছে।’

ওএমআর-ভিত্তিক ভোট গণনা বাতিল ও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সৃষ্টি অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তার এই গ্লানি এখনও আমাদের টানছে। এখন পর্যন্ত যারা গণনা করছেন তাদের নানা অসুবিধা হচ্ছে; কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। বাস্তবে আজকের মধ্যে সম্পূর্ণ ভোট গণনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ওএমআরকে অযথা অজুহাত দেখিয়ে ছাত্রদল নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে—এটাই আমাদের ধারণা।’

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ তিনি তুলেছেন নির্বাচনের ব্যঘাত ঘটানোর পেছনে কিছু শিক্ষক সক্রিয় থাকার ব্যাপারে। মাজহারুল বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম (অধ্যাপক নজরুল ইসলাম (Professor Nazrul Islam)) ও অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার (অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার (Professor Mafruhi Sattar)). তিনি বলেন, অধ্যাপক নজরুল একজন হলের প্রাধ্যক্ষ হওয়া সত্ত্বেও অন্য একটি ছাত্রী হলে ঢুকে মব সৃষ্টি করেছেন; এতে নির্বাচন কিছুক্ষণ স্থগিত হয়েছিল। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ছাত্রদলকে ব্যবহার করে এই শিক্ষকরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। হলের বাইরে বহু প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেখা গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়নি।’

মাজহারুল আরও উল্লেখ করেন, ‘আজ সকালে একজন শিক্ষিকা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন; তিনি গতকাল দায়িত্ব পালন করেননি। কিন্তু নজরুল ইসলামের গ্রুপ এটিকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে।’ তিনি এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও উদ্দেশ্য খুঁজছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যের একাংশে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই ক্যাম্পাস কোনো স্যারের গ্রুপও নয়, কোনো দলেরও নয়। শিক্ষার্থীরা ৩৩ বছর পর হওয়া জাকসু নির্বাচন চায়—এটাই আমাদের দাবি। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, আমরা একটি নিরপেক্ষ (ফেয়ার) নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত হই বা না হই—আমাদের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। যারা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটকে মানতে ইচ্ছুক নন, তারাই এই নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি স্পষ্টভাবে জানালেন, যদি আজই ভিন্নভাবে ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা না করা হয়, তাহলে তাদের প্যানেল দৃঢ় অবস্থান নেবে। ‘নির্বাচন বানচাল করার যে অপপ্রয়াস হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না। কেউ যদি নির্বাচন বানচাল করতে চায়—আমরা তা প্রতিহত করব,’—মাজহারুল সমাপ্ত বক্তব্যে বলেন।

ছাত্রশিবির (Chhatra Shibir) সমর্থিত এই প্যানেলের দাবি ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেবে—এই প্রশ্নটা এখনই অনির্দিষ্ট রয়ে গেছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল (Central Chhatra Dal) ও বাগছাস—যাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে—তারা পরবর্তী সময়ে কী প্রতিক্রিয়া দেবেন, সেটাও রয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *