ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। প্রতিদিনই নির্বিচারে বোমা বর্ষণ ও গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে ত্রাণবাহী গাড়ি ও সহযোগিতামূলক সামগ্রী আটকানো হচ্ছে, হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অচল হয়ে পড়েছে। ন্যূনতম জীবনধারণের উপকরণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

সংঘাতের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ালেও ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু পশ্চিমা দেশ ভিন্ন অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে স্পেন (Spain) ও আয়ারল্যান্ড (Ireland) অন্যতম। নতুন করে এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল আরো তিনটি দেশ—যুক্তরাজ্য (United Kingdom), কানাডা (Canada) এবং অস্ট্রেলিয়া (Australia)। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—এখন পর্যন্ত কতগুলো দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা (Al Jazeera)-এর তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালে স্বীকৃতি দেওয়া দেশ হলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। ২০২৪ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে বাহামা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা ও বারবাডোজ।

ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য না হলেও এর সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোতে পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে। তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে ‘সদস্যপদহীন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দেশটিকে একটি পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।

২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা এবং গ্রেনাডা।
২০১২ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৩ সালে গুয়াতেমালা, হাইতি ও ভ্যাটিকান সিটি, ২০১৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে সুইডেন, ২০১৫ সালে সেইন্ট লুসিয়া, ২০১৮ সালে কলোম্বিয়া, ২০১৯ সালে সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস এবং ২০২৩ সালে মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে পূর্ব তিমুর (২০০৪), প্যারাগুয়ে (২০০৫), মন্টিনিগ্রো (২০০৬), কোস্টারিকা, লেবানন ও আইভরি কোস্ট (২০০৮), ভেনিজুয়েলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র (২০০৯), ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডর (২০১০) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি জানায়।

১৯৯৩ সালে প্রথম অসলো চুক্তি এবং ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি তখনো কার্যকর হয়নি। এরও আগে ১৯৮৮ সালে প্রথম ইন্তিফাদার সময় পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স থেকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, যার রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের কথা উল্লেখ ছিল। প্রথম দেশ হিসেবে আলজেরিয়া স্বীকৃতি দেয় ফিলিস্তিনকে।

এরপর একই বছরে বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কিউবা, জর্ডান, মাদাগাস্কার, মাল্টা, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সার্বিয়া, জাম্বিয়া, আলবেনিয়া, ব্রুনাই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিশর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, চীনসহ অসংখ্য দেশ স্বীকৃতি প্রদান করে।

এর বাইরে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, ইরান, বেনিন, কেনিয়া, ফিলিপাইন, কাজাখস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান, মালাউইসহ আরও অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সূত্র: আলজাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *