ভারতের ভূ-অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে কোনো প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না। তার সামনে রাখা হয়েছে দুইটি বিকল্প — যার প্রথমটিতে বলা হচ্ছে, আপনাকে নিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগ (Awami League)-কে সংগঠিত করা সম্ভব হবে না; কারণ জনমত আপনার বিপক্ষে সরে গেছে, ঠিক যেমন ভারতের প্রেক্ষাপটে ঘটেছে। সেই প্রস্তাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণহত্যা চালানোর দায় আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না; আপনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে এবং সেই মামলায় আপনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। দালিলিক প্রমাণসহ একাধিক অভিযোগে দ্রুত ফয়সালা হলে আপনি দণ্ডপ্রাপ্ত হতে পারেন — এমন অবস্থায় দেশে ফিরে আসা অত্যন্ত কঠিন; মিরাকল না ঘটলে পরিবর্তন হবে না, এই ভীতি প্রকাশ পেয়েছে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে।
অপর প্রস্তাবটি হচ্ছে: আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের কাজ অন্য কাউকে দেওয়া যাক। এতে দলের সংগঠন দ্রুত ঠিক রাখা সম্ভব হবে। ইতিহাস এখানে উদাহরণ হিসেবে টাঙান হয়েছে — ১৯৭৫ সালের পরে বাকশাল গঠন করে যখন আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব স্তব্ধ হয়েছিল, ১৫ আগস্টের ঘটনাবলির পর বাকশাল শেষ হলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman) দলের পুনর্গঠনের সুযোগ দেন। তখন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন (Syeda Zohra Tajuddin)-এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার সংগঠিত হয়; তখনও আপনি ভারতে অবস্থান করছিলেন।
১৯৭৯ সালে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন লাভ করে। সংসদে তখন নেতৃত্বদান করেন প্রয়াত এডভোকেট আসাদুজ্জামান খান (Advocate Asaduzzaman Khan)। সংসদে আপনার ফেরা নিয়ে তৎকালীন সময়জুড়ে বিরতিহীনভাবে আলোচনা হয়; বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ব্যষ্টিতে জনগণের মধ্যে আপনার ফেরার প্রতি সমর্থন গড়ে ওঠে। অবশেষে ১৭ মে ১৯৮১ সালে আপনি দেশে ফিরে আসেন জিয়ার সবুজ সংকেত নিয়ে — এরপর নানা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আপনি ক্ষমতায় ফেরেন।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি বদলে গেছে। দলের নেতৃত্ব এখন তরুণ প্রজন্মের হাতে; বড় রাজনৈতিক দলগুলো, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভাবনা ও দেশাত্মবোধক জনমত মিলিয়ে, আপনার ফিরতে সম্মত হবে না—এমনটাই বলে প্রস্তাবত্যাগকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে দুইটি পশ্চিমা শক্তি এই বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে বলেও সূত্রগুলোর দাবি। ভারতের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে তীব্র মতবৈষম্য বিদ্যমান: কেউ বলছেন, হাসিনাকে রাখায় আমরা সমগ্র বাংলাদেশই হারিয়েছি — আবার অন্যরা ভূ-রাজনৈতিক কারণ ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের কথা বলছেন। এই বিতর্কের মাঝেই বহু বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীর ভবিষ্যৎকথা উঠেছে; তাদের প্রায় অর্ধেক ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়।
তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে থাকা অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী দলের পুনর্গঠন বিষয়ে ইতিবাচক — তাঁরা মনে করেন দলকে নতুন করে গঠন করা সম্ভব এবং উচিত। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করেননি; তিনি এখনও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবেন এবং লড়াই করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে কিছু মন্তব্যে ছিল। অন্যদিকে, অনামודে থাকা এক নেতার মত, বাস্তবতা মানা না হলে দল মুসলিম লীগভিত্তিক বিলুপ্তির সম্মুখীন হবে — ইতিহাস শুনিয়ে বলা হয়, মুসলিম লীগের মতো একটি দল ছিল কিন্তু ১৯৭১ সালের বিরোধিতার পর একেবারে বিলীন হয়ে যায়; স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা ছিল আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই।
কূটনৈতিক মহলে আবার অর্থ রচনার জরুরি যুক্তি উঠে এসেছে: অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে হলে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অপরিহার্য ছিল—কারণ তাদেরও ভোট রয়েছে; ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ আইনত সম্ভব হবে না; এ কারণেই কূটনীতিকরা বলেন — বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে হাসিনার ভাবা উচিত, যাতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেশের স্থিতি টিকিয়ে রাখা যায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভাষায়, শেখ হাসিনা এখন ছায়ামুখী এক লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন; তিনি আশা করছেন যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) চলে গেলেন, তাহলে তাঁর ফেরাটা সহজ হবে। ঢাকায় রাজনৈতিক আলোকচিত্রে বলা হয়, এক নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি গোপনে কিছু সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে; অতীত অভ্যুত্থানের পর ওই শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ ক্ষমার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছিলেন। ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেই শীর্ষ নেতার বক্তব্য ছিল—“আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না; রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে, আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।” এই ধরনের মেসেজ ও কূটনৈতিক চাপের মাঝেই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত গঠন ও দলের ভবিষ্যৎ কীভাবে টিকবে—এটাই এখন রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। তথ্যসূত্র : মানবজমিন