গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (Jonayed Saki) রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি ছড়ানো কিছু বক্তব্যকে উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সময় সংবাদের সম্পাদকীয় আলোচনায় তিনি বলেন, পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি বা নির্দিষ্ট প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হবে না—এমন অবস্থান গণতান্ত্রিক ভাষা নয় এবং তা দেশের রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল এমন অবস্থান নিয়েছে যেখানে তারা প্রকাশ্যে জানাচ্ছে, তাদের দাবি মানা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। সাকি এই ধরনের বক্তব্যকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা ইতিবাচক নয়, দায়িত্বশীলও নয়। সবাইকে যুক্তিসঙ্গত জায়গায় দাঁড়াতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর নিম্ন কক্ষে পিআর দাবি প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, তাদের এ দাবি করার অধিকার আছে এবং তারা এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু এই দাবিকে নির্বাচন-শর্তে পরিণত করা রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী। সাকি বলেন, “পিআর না হলে নির্বাচন হবে না—এমন অবস্থান শক্তি পরীক্ষার আহ্বান, যা শেষ পর্যন্ত সংঘাত সৃষ্টি করবে। অনুরূপভাবে শাপলা প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হবে না বলা, সেটাও দায়িত্বজ্ঞানহীন।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের ইতিহাসে কোনো অভ্যুত্থান একক শক্তির নেতৃত্বে হয়নি। তাই শক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সমাধান চাইলে সেটা অনিবার্য সংঘাত ডেকে আনবে। সাকি বলেন, “প্রথম ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আমরা ঠিক করেছিলাম, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মীমাংসা করবে। কিন্তু শক্তি পরীক্ষায় গেলে দলগুলো পাল্টা শক্তি প্রদর্শন করবে, আর সেখানেই সংঘাত তৈরি হবে।”
জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে সাকি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা উত্তরণের পথ দেখবো কোনভাবে—শক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে, নাকি জনগণের রায়ে?” তার মতে, জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেটাকেই গণতান্ত্রিকভাবে মেনে নিতে হবে।
সংবিধানের আর্টিক্যাল ৭০ ইস্যুতে পূর্ববর্তী আলোচনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চারটি একসেপশন নিয়ে কথা হয়েছিল। প্রথম দুটি সবার সম্মতিতে গৃহীত হলেও বিএনপি অতিরিক্ত দুটি প্রস্তাব রাখে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, দলগুলো চাইলে ইশতেহারে এগুলো রাখতে পারবে এবং নির্বাচনে যে দল জয়ী হবে, তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী সংস্কার করা হবে। কিন্তু হঠাৎ উচ্চ কক্ষের পিআর প্রসঙ্গ তোলা হয়, যা আলোচনার এজেন্ডায় ছিল না। ফলে সমঝোতার পরিবর্তে নতুন দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং এখন নিম্ন কক্ষে পিআরের দাবি বারবার সামনে আসছে।
সাকি শেষ পর্যন্ত মনে করিয়ে দেন, নিম্ন কক্ষে পিআর বিষয়টি কখনো ঐকমত্য আলোচনার অংশ ছিল না। “তবুও কোনো দল দাবি তুলতেই পারে, সেটা তাদের অধিকার। কিন্তু এ দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন হবে না বলা বিপজ্জনক অবস্থান।”