জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিতব্য জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে হঠাৎ করেই অবস্থান নিয়েছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’ (July Warriors)। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পর তারা সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করেন এবং মঞ্চের সামনে সাজানো চেয়ারে বসে পড়েন। সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তারা সংসদ ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন। সকাল বেলায় ফটক টপকে ভেতরে ঢুকে তারা সরাসরি মঞ্চ এলাকায় চলে যান। এসময় তাদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
ঘটনাস্থলে এরই মধ্যে পুলিশের একাধিক টিম উপস্থিত হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকেই জুলাই যোদ্ধারা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন এবং তারা বর্তমানে মঞ্চে অবস্থান করছেন। তাদের মূল দাবি—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা ও জুলাই আন্দোলনের সময়কার মামলাগুলো থেকে দায়মুক্তি প্রদান।
এদিকে দীর্ঘ সাত মাসের সংলাপের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে কমিশন শুক্রবার বিকেল ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের আয়োজন করেছে। এই উপলক্ষে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিশেষ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করবেন বলে নির্ধারিত ছিল।
তবে বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি নিশ্চয়তা এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি নোট) নিয়ে এখনো বেশ কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে।
এরই মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens Party) ঘোষণা দিয়েছে, বাস্তবায়ন আদেশ ও আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পেলে তারা জুলাই সনদে সই করবে না। অন্যদিকে চারটি বাম দল জানিয়েছে, তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদে সই করবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) জানিয়েছে, তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে, তবে সনদে সই করবে কি না—তা এখনো নির্ধারণ করেনি। দলটি জানায়, বাস্তবায়নের সুপারিশ দেখে তবেই তারা স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) (Bangladesh Nationalist Party – BNP) তাদের অঙ্গীকারনামায় স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা সনদে সই করবে কেবল তখনই, যদি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়।
জুলাই সনদ ঘিরে এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মঞ্চে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ প্রবেশ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিকেলের অনুষ্ঠানের আগে কমিশন ও প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়, এখন সেটিই দেখার বিষয়।