স্থানীয়দের তোপের মুখে গণসংযোগে ছেড়ে পালালেন আমি-ডামি নির্বাচনে সংসদ সদস্য এ কে আজাদ

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপিপন্থী রাজনীতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘায়েল করতে এ কে আজাদ (AK Azad) ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল (Jubo Dal) নেতাদের কাছ থেকে। রোববার বিকেলে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজারে এ কে আজাদের গণসংযোগ চলাকালে সামান্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও, তা ইচ্ছাকৃতভাবে “যুবদলের হামলা” হিসেবে প্রচার করছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।

বিকেল চারটার দিকে পরমানন্দপুর বাজারে গণসংযোগে যান ২০২৪’র বিতর্কিত আমি-ডামি নির্বাচনের ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তাঁর সঙ্গে ওই সময় আওয়ামী লীগপন্থী বেশ কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরে স্থানীয় তরুণ ও ব্যবসায়ীরা “আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে” স্লোগান দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাস্থলে সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নান্নু মোল্লা উপস্থিত থাকলেও, তাঁদের নেতৃত্বে কোনো সংগঠিত হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, বাজারে দুই পক্ষের স্লোগান ও তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ কে আজাদের নিরাপত্তা টিম ও পুলিশের মধ্যে তখন উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তার স্বার্থে স্থান ত্যাগ করতে অনুরোধ করে। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তাঁর গাড়িবহর সরে যায়। এই সময় হঠাৎ পিছনের দুটি গাড়িতে বাজারের কিছু তরুণ আখ হাতে আঘাত করলে কাচ ভেঙে যায়। কিন্তু ওই তরুণরা কারা—তা নিশ্চিত নয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার সঙ্গে যুবদলের সংগঠিত কোনো অংশের সম্পৃক্ততা ছিল না।

ঘটনার পর এ কে আজাদ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।” তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী নায়াব ইউসুফ (Nayab Yusuf)-এর অনুসারীরাই নাকি তাঁকে লক্ষ্য করে আচরণ করেছেন। তবে নায়াব ইউসুফ এ অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “এ কে আজাদ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। আমি আমার কর্মীদের কঠোরভাবে বলেছি, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় জড়াবে না।”

জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনও এ কে আজাদের অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, “সদর উপজেলার কোনো ইউনিয়নে যুবদলের কমিটি নেই। পরমানন্দপুরে আমাদের সংগঠিত কোনো কর্মীই এমন ঘটনায় যুক্ত নয়।”

অন্যদিকে পুলিশও জানিয়েছে, বাজারে দুই পক্ষের গণসংযোগ চলছিল। ফলে মুহূর্তের ভুল বোঝাবুঝিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান বলেন, “আমরা সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। এ কে আজাদের গাড়িবহর নিরাপদে চলে গেছে।”

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঘটনাটিকে “যুবদলের হামলা” হিসেবে প্রচার করে এ কে আজাদ নিজের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছেন। কারণ, নির্বাচনী মাঠে এখন ফরিদপুর-৩ আসনে বিএনপি ও যুবদলের তৃণমূল নেতৃত্ব জনপ্রিয়তায় এগিয়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *