জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ( Naseruddin Patwary ) বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিনি ‘লাউ-কদুইlection’ বলেই দেখেন—এখানে লাউ হচ্ছে বিএনপি ( BNP ), কদু হচ্ছে জামায়াত ( Jamaat )। তিনি বলেন, চারদলীয় জোটে লাউ আর কদু একসঙ্গে ছিল; লাউ তেমন খারাপ কিছু নয়, কিন্তু যে লাউ-কদু দিয়ে ইলেকশন করাটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই ইলেকশনের আগে আরও বহু প্রক্রিয়া জরুরি। “লাউ আর কদু—কোনো ইলেকশন আমি দেখতে চাই না,” তিনি কড়া ভাষায় জানান।
বিএনপি-জামায়াত জোট প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন বলেন, “তারা নিজেদের মধ্যে একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে একই জোটে ছিল, এখন সেখানে কিছু ভাঙন পড়েছে। আমাদের বিরোধী, আপনারা সরকারী—এ ধরণের বিভাজন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও স্পষ্ট হবে।” এই মন্তব্যগুলো তিনি আজ (মঙ্গলবার) প্রেস ক্লাবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে করেন।
নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, এনসিপি কখনও ‘জুলাই বিক্রি’ করেনি—এই অভিযোগ বহুদিন ধরেই আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। “আমরা জুলাই বিক্রি করতে আসিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা একটি তেলের ট্যাঙ্কারের মতো কাজ করে থাকি। আপনি জামায়াত বলেন, আপনি বিএনপি বলেন—গত ১৫ বছর, ৫৩ বছরে আপনি বড় বড় জাহাজ বানিয়েছেন; কিন্তু আপনার জাহাজে তেল নেই। সমুদ্রে আপনারা জাহাজ ভাসিয়েছেন, জাহাজ ভাসানোর পরে এনসিপি বাংলাদেশের সন্ধিক্ষণে এসে তরুণ, যুবক ও ছাত্র মিলে তেল নিয়ে হাজির হয়েছে,” তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন।
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংবিধান নিয়ে তার তীব্র আভাসও ছিল। নাসীরুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ কখনো কেবল গণভোট বা ইলেকশনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখেনি—তার চেয়ে গণঅভ্যুত্থান বেশি প্রভাব ফেলেছে। “আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না যে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আপনারা হারিয়ে যান,” তিনি বলেন। তিনি সময়ের যুগে-বিশেষে সংবিধান প্রয়োগের অনিয়ম নিয়েও কথা বলেন—বর্ণনা করে বলেন, দেশে কয়েক দফায় ‘সংবিধান’ থাকলেও তা কখনোও আইনি-সাম্যতার প্রতিচ্ছবি হয়নি; মুজিব, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা—প্রত্যেকেই তাদের মত অনুযায়ী সংবিধানকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা তো সংবিধানের উপরে উঠে গিয়েছিলেন”—এ জটিল পরিস্থিতি কাটিয়ে সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে সংবিধানের আওতায় আনার চেষ্টা এনসিপি করবে।
রাজপথে সহিংসতা বিষয়ে তিনি নিরাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আর একটি লাশও রাজপথে দেখতে চাই না। এই সংবিধানের নামে আমার ভাইদেরকে খুন করা হয়েছে। এই সংবিধানের কারণে দেশের যত ইনস্টিটিউশন আছে—প্রত্যেকটা কলাপ্স করেছে; সেই অবস্থা আমরা ভবিষ্যতেও দেখতে চাই না।”
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি দেশের জনগণের যে অনেকে প্রশ্ন আছে, সেগুলোর উত্তর দেওয়ারও কথা বলেন। উদাহরণ হিসেবে নাসীরুদ্দীন তুলে ধরেন, “আমরা কি পাঁচ তারিখে শাহবাগ থেকেই ঘোষণাপত্র দিতে পারতাম—কিন্তু সেখানে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। ওই দিন রাজনৈতিক দলগুলো কেন ক্যান্টনমেন্টে গেল? তারা বলল ফোনে ডাকা হয়েছিল, আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। তাহলে ভাই, রাজনীতি করলেন কেন? জনগণের জরুরি পরিস্থিতিতে আপনি কোনো সাড়া দিতে পারেননি—তাহলে ক্যান্টনমেন্টে গেলেন কেন? আপনাকে শাহবাগে এসে জনতার কাতারে দাঁড়াতে হতো।”
বক্তৃতার শেষাংশে তিনি সরকারের এবং বিরোধীদলীয় কায়দা-কানুন, গণআন্দোলন ও সংবিধানগত প্রশ্ন নিয়ে ভাবুক সমালোচনা করেন এবং দেশকে সহিংসতা ও প্রতিষ্ঠানগত বিপর্যয় থেকে বের করে সতর্ক, সংবিধান-ভিত্তিক রাজনীতির দিকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান শেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে না যে রাজপথে আর প্রাণহানির দৃশ্য দেখতে হবে না।


