এনসিপি বুঝে না বুঝে আরেকটি মওদুদীবাদি প্রক্সি দল হয়ে দেশকে ১/১১’র মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে: রাশেদ খাঁন

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন (Muhammad Rashed Khan) অভিযোগ করেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP) বুঝে না বুঝে আরেকটি মওদুদীবাদি প্রক্সি দলে পরিণত হচ্ছে। তার দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ঐক্যমত কমিশন জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি ছাড়া অন্য সব দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে রাশেদ খাঁন এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই সনদের পক্ষে একই দিনে ভোটের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটে ‘না’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

রাশেদ খাঁন তার ফেসবুক পোস্টে সাতটি পয়েন্টে বিস্তারিতভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেন, ঐক্যমত কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞরা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দেন।
তার ভাষায়, “সেই সময় জামায়াত ছাড়া সকল দল ঐক্যমতে পৌঁছায়— এমনকি এনসিপিও তখন এই অবস্থান নেয়।”

তবে রাশেদ জানান, “পরদিনই এনসিপি হঠাৎ তাদের অবস্থান বদলে ফেলে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সে সময় তিনি নিজেও এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা সবাই শুনেছেন।

এরপর থেকেই, তার দাবি অনুযায়ী, জামায়াত ও এনসিপি একই অবস্থানে চলে আসে— এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। কিন্তু এনসিপি নাকি জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসুক, সেটা চায় না। বরং তারা সম্পর্কটি গোপন রাখতেই আগ্রহী।

রাশেদের বক্তব্যে উঠে আসে, এনসিপি ও জামায়াত নিজেদের আলাদা রাজনৈতিক অবস্থান প্রমাণে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার প্রমাণ দেখাতেই এনসিপি পিআর ইস্যুতে জামায়াতের সমালোচনায় যায়। এটা একধরনের রাজনৈতিক কৌশল।”

তার ব্যাখ্যায়, “জামায়াত যা প্রকাশ্যে করতে পারে না, তা এনসিপিকে দিয়েই করানো হচ্ছে।” রাশেদ খাঁনের মতে, এনসিপির ভেতরে জামায়াত-শিবির ঘরানার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা নাহিদ ইসলামদের মতো নেতাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, পূর্বে তার লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেছিলেন— “জামায়াত শিবিরের নিয়োগ নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুটি দল হলো গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি।”

আরেক পয়েন্টে রাশেদ স্মরণ করিয়ে দেন, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) কিছুদিন আগে একটি পোস্টে লিখেছিলেন— ‘নতুন করে আরেকটি মওদুদীবাদি প্রক্সি দলের কোনো দরকার নেই।’ রাশেদের মতে, “এই মন্তব্যের পেছনের কারণ এখন বোঝা কঠিন নয়। এনসিপি বুঝে না বুঝে মওদুদীবাদি প্রক্সি দলে রূপ নিচ্ছে, ফলে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা হারিয়ে যাচ্ছে। মাহফুজ আলমের ক্ষোভের কারণও এখানেই।”

পোস্টের শেষভাগে রাশেদ খাঁন সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার বক্তব্য, “১৪ মাসেও সরকার নিজের ফিটনেস তৈরি করতে পারেনি। হাতে সময় আছে মাত্র ৪ মাস। এই অল্প সময়ের মধ্যে দুটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, “নভেম্বরের গণভোটের প্রসঙ্গ এনে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে, যার একমাত্র সুবিধাভোগী হবে আওয়ামী লীগ।”

রাশেদ খাঁনের মতে, ঐক্যমত কমিশন যখন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়াই সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে, তখন প্রশ্ন ওঠে— “রাষ্ট্রের অর্থ ৯ মাস কেন অপচয় হলো?” তার যুক্তি, “৮৪টি বিষয়ে ৯ মাস আগেই গণভোট নেওয়া যেত।”

পোস্টের উপসংহারে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ঐক্যমত কমিশন জামায়াত ও এনসিপি বাদে সকল দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। রাষ্ট্রকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আরেকটি ১/১১ অনিবার্য করে তোলা হচ্ছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *