ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan)-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের পরদিনও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল আশ্চর্যজনকভাবে শান্ত। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Associated Press (এপি)-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের দল আওয়ামী লীগের ডাকা ধর্মঘট সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে জনজীবন ছিল স্বাভাবিক।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। অভিযোগ ছিল, গত বছর ছাত্র বিক্ষোভ দমনকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে গুরুতর নিপীড়ন চালানো। অভিযোগের মধ্যে ছিল উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারে প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের নির্মূলের চেষ্টাও।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতের এই রায়কে আওয়ামী লীগ ‘একটি কাঙারু আদালতের নাটক’ বলে অভিহিত করেছে এবং পরদিন দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে মঙ্গলবার দোকানপাট, স্কুল, যানবাহন চলাচলসহ জনসাধারণের স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততায় কোনো বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেনি। এমনকি ধর্মঘট কার্যত ব্যর্থই হয়েছে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
তবে সোমবার রাতের চিত্র ছিল ভিন্ন- বিশেষ করে যখন শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির বাড়িটি স্কেভেটরের মাধ্যমে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। কিশোরগঞ্জেও উত্তেজনা ছড়ায়, যেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবদুল হামিদ (Abdul Hamid)-এর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনাকে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারসহ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার কারণে তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। মামলায় এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন, একজন সাবেক পুলিশ প্রধান রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়ানোয় তাঁকেও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। যদিও পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল, তবে পরবর্তী দিনে কী ঘটবে তা নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।


