সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণে আগামীকাল রবিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jagannath University) সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় এনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত শিগগির জানানো হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
অন্যদিকে, জবির উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ভূমিকম্পজনিত উদ্বেগের কারণে রবিবার জবির সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-এর (JUCSU) নির্বাচনী কার্যক্রম ও দাফতরিক কাজ চলবে যথারীতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবহন চালু থাকবে, তবে শিক্ষার্থীদের বাস বন্ধ থাকবে। স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিভিন্ন হলে ফাটল, আহত ২২ শিক্ষার্থী
ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের আবাসিক হলে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাবির হলগুলোতে আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে অন্তত ২২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল-এ ৬ জন, জিয়াউর রহমান হলে ৩ জন, বিজয় একাত্তর ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২ জন করে, স্যার এফআর ও জসীমউদ্দীন হলে ২ জন করে, রোকেয়া, শামসুন্নাহার, মৈত্রী, সূর্যসেন ও এফএইচ হলে একজন করে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (Dhaka Medical College Hospital) এবং তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছেন, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হলে ফিরে গেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে হেলে পড়ার অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Rajshahi) শেরেবাংলা ফজলুল হক হলের একটি অংশ হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ১৯৬২ সালে নির্মিত এই ভবনে আগে থেকেই ফাটল ছিল। ভূমিকম্পে তা আরও বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভে নামেন। পরে প্রশাসন নতুন দশতলা (সাকিব–রায়হান) ভবনে তাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।
হলের প্রাধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “হলটি ঝুঁকিপূর্ণ, সরজমিনে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা কাল থেকেই নতুন হলে উঠতে পারবে।”
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
- নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলের পলেস্তারা খসে পড়েছে, সিঁড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়-এর নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের নিচতলার কর্নারে দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর শেখ রাসেল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেও দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে।
- ঢামেক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসেও বিভিন্ন কক্ষের দেয়াল ও সিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুহসীন হল অবরোধ, সিট দাবি শিক্ষার্থীদের
ভূমিকম্পের পরপরই ঢাবির মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা জহুরুল হক হলসংলগ্ন কর্মচারী ভবন অবরোধ করেন। তারা সেই ভবনে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের দাবি জানায়। পরে কিছু শিক্ষার্থী বিছানা-বালিশ নিয়ে সেখানে অবস্থান শুরু করেন।
হলের ভিপি সাদিক হোসেন সিকদার বলেন, “২০১৪ সাল থেকে এই হলকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ বছরেও কোনো সংস্কার হয়নি।”
ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান (Dr. Niaz Ahmed Khan) জানান, “হল সংস্কারে ১৪৯ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর আশা করছি। আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ হলের শিক্ষার্থীদের জুলাই স্মৃতি ভবনে স্থানান্তর করা হবে।”


