সংবিধান বাতিল নয়, শুদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে জুলাই বিপ্লব: প্রধান বিচারপতি

জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের সংবিধান বাতিলের কথা বলেনি, বরং এটি জনজীবনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সাড়া দেওয়ার মনোভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্ততাকে শুদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Chief Justice Syed Refaat Ahmed)।

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিল সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (Center for Governance Studies – CGS)।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের ব্যাকরণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতি বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অলংকার নয়। বরং এটি একটি নৈতিক পাঠ—যা ন্যায্যতা, যুক্তি এবং জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে গঠিত।”

তিনি আরও বলেন, “এই শাসনব্যবস্থা অধিকারের মাধ্যমে, সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে, এবং শাসিতদের মর্যাদার মাধ্যমে তার বৈধতা উপস্থাপন করে। সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর। অতীতের ত্রুটি ও কাটাছেঁড়ার পরও এটি এখনও আমাদের সবচেয়ে বড় ভিত্তি।”

বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য ঘোষিত রোডম্যাপ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমরা যে সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি, তা জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে একটি কাঠামো দেওয়ার প্রয়াস। এই রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা অভূতপূর্ব বিচারিক রোডশোর ধারাবাহিকতায় নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি।”

তিনি বলেন, “বিচারক নিয়োগে বিধান প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্ব অপরিসীম। এর আলোকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় বড় দেশ ও শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে বাংলাদেশেরই সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সিজিএস এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman) ও নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী (Parvez Karim Abbasi)।

তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৮৫টি দেশের ২০০ জন আলোচক, ৩০০ জন ডেলিগেট এবং এক হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী যোগ দিয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *