তারেক রহমান (Tarique Rahman), বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির (BNP) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইংরেজিতে লেখা এই দীর্ঘ পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন—একটি অনির্বাচিত সরকার কীভাবে দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার প্রভাব বহন করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
পোস্টের সূচনাতেই তারেক রহমান তুলে ধরেন গাজীপুরের এক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকের বাস্তব চিত্র। দীর্ঘ দশ বছর ধরে শ্রম ও শ্রমিকনির্ভর পরিশ্রমে গড়ে ওঠা ব্যবসা এক ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়, যখন রপ্তানির ওপর দেওয়া সুবিধা কমে যায়। অর্ডার হারিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়ে কষ্টের মুখে পড়েন ওই মালিক।
এরপর তিনি বর্ণনা করেন নারায়ণগঞ্জের এক তরুণী ও তার পরিবারের সংকট। পরিবারের আয় মূলত নির্ভর করে ওভারটাইমের উপর, যা রপ্তানি চাপে প্রথমেই কাটা পড়ে। এরপর একে একে আসে ডিউটি কমে যাওয়া, ছাঁটাই এবং চাকরি হারানোর শঙ্কা। এই ধরনের নীরব অর্থনৈতিক সঙ্কট যে সাধারণ মানুষের জীবনকে কীভাবে নড়বড়ে করে তোলে, তা তাঁর পোস্টে রয়েছে স্পষ্টভাবে।
তারেক রহমানের বক্তব্য—২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের যে সময়সূচি নির্ধারিত, তা কার্যত একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এমন একটি সরকার নিচ্ছে, যার হাতে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। অথচ এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কয়েক দশক ধরে টানবে দেশের সাধারণ মানুষ।
তিনি সরকারের সেই বক্তব্যের সমালোচনা করেন, যেখানে বলা হয়েছে—উত্তরণের সময় পেছানো গেলে জাতিসংঘ সেটিকে অপমানজনক মনে করতে পারে। তারেক রহমান যুক্তি দেন, অ্যাঙ্গোলা, সামোয়ার মতো দেশ এই সময়সীমা পিছিয়ে নিয়েছে এবং জাতিসংঘ নিজেই অর্থনৈতিক চাপে থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরাই বা কেন আলোচনায় বসার আগেই বিকল্প সম্ভাবনাগুলো বাতিল করছি? কেন দর কষাকষির শক্তি আগে থেকেই দুর্বল করছি?’ তিনি মনে করেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, ঋণঝুঁকি এবং রপ্তানি কমে যাওয়ার মতো সংকেত দেখিয়ে দেয়—এই উত্তরণের জন্য এখনও বাংলাদেশ পর্যাপ্ত প্রস্তুত নয়। শুধুমাত্র ‘অধিকারের’ দোহাই দিয়ে উত্তরণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক চুক্তিকেও একই ধারায় সমালোচনা করেন তারেক রহমান। তাঁর মতে, এটি কোনো রুটিন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং জাতীয় সম্পদ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সিদ্ধান্ত—যার দায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বইতে হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যেভাবে এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে জনমত উপেক্ষা করা হচ্ছে, একইভাবে বন্দর ব্যবস্থাপনাতেও জনসম্পৃক্ততা নেই।
পোস্টে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এটি কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। বরং দেশের গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক ধারাকে রক্ষা করার দায় থেকেই এই প্রশ্ন তোলা। তিনি পরিষ্কার করেন, বিএনপি এলডিসি উত্তরণ বা বন্দর উন্নয়নের বিরোধিতা করছে না, বরং চায়—এই সিদ্ধান্তগুলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকুক।
পোস্টের শেষাংশে তারেক রহমান একটি আশাবাদী বার্তা দেন। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশের মানুষ কখনোই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন নয়। তারা সম্মান চায়, অংশগ্রহণ চায়, এবং নিজের কণ্ঠস্বরকে মূল্য দিতে চায়। এ কারণেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে তিনি দেখছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে। তিনি লেখেন—“আমরা অনেকেই সেই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি, যা আমাদের বলার, নির্বাচনের এবং একটি সহজ সত্য পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ দেবে—এই দেশ তাদের দ্বারাই পরিচালিত হওয়া উচিত যারা এখানে বসবাস করে এবং যারা ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এ বিশ্বাস করে।”


