আসন বণ্টনে টানাপোড়েন – ভাঙল গণতন্ত্র মঞ্চ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন যাচ্ছে এনসিপির নতুন জোটে

ভেঙে গেল গণতন্ত্র মঞ্চ (Ganatantra Mancha)। জোট ছেড়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন (Bangladesh Reform Movement), যারা এখন নতুন করে জোট বাঁধতে যাচ্ছে এনসিপি (NCP)-র সঙ্গে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি, তবে রাজনৈতিক সূত্র বলছে, বিষয়টি শুধু সময়ের অপেক্ষা।

রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে জোট ত্যাগের কারণ বলা না হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন—আসন বণ্টন নিয়ে টানাপোড়েন থেকেই এই সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বিএনপি (BNP)-র সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনাতেই তিক্ততা তৈরি হয়েছে বলে ধারণা অনেকের।

রাষ্ট্র সংস্কারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া জানান, ‘আমরা বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে নয়, বরং একটি নতুন বিকল্প রাজনৈতিক জোট গঠন করতে চাই। বর্তমান রাজনীতির যা প্রয়োজন, সেটি এই দুই জোট করতে পারছে না।’

এনসিপির সঙ্গে জোটে যেতে পারে আরও দুটি দল—আপ বাংলাদেশ ও এবি পার্টি। এই তিন দলই সম্প্রতি একাধিকবার বৈঠক করেছে গণ অধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)-এর সঙ্গে। জোট গঠনের বিষয়ে সংলাপ এগিয়েছে অনেকদূর।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই নতুন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।’

২০২২ সালে যে সাতটি দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছিল—তারা হলো: জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ। এরা সবাই বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি তৈরিতেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল মঞ্চের।

তবে ২০২৩ সালের মে মাসে নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur)-এর গণ অধিকার পরিষদ প্রথম মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়। এবার দ্বিতীয় দল হিসেবে রাষ্ট্র সংস্কারও পথ আলাদা করল।

রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে আসন বণ্টনের ইস্যু। রাষ্ট্র সংস্কার বিএনপির কাছে আসন দাবি করেছিল, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলন আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিলেও রাষ্ট্র সংস্কারকে এখনও সে বার্তা দেয়নি বিএনপি। যদিও দিদারুল ভূঁইয়ার দাবি, আসন নয়, বরং রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই তারা মঞ্চ ছেড়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি বিএনপি-জামায়াতের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে। এই লক্ষ্যে সবাইকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানাই।”

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল, এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ একাধিকবার বৈঠক করেছে। উদ্দেশ্য ছিল সংস্কারের যৌথ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা এবং বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে নতুন কাঠামো তৈরি। আলোচনায় উঠে এসেছিল নয় দল মিলে একটি আলাদা জোট গঠনের প্রস্তাব।

তবে মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna)-র নাগরিক ঐক্য, জুনায়েদ সাকি (Junaid Saki)-র গণসংহতি আন্দোলন এবং আ স ম আবদুর রবের জেএসডি—এই তিনটি দল বিএনপির সঙ্গে থাকতেই আগ্রহী। তাদের অবস্থান ছিল, নয় দল মিলে থাকলেও তা বিএনপির জোটেই। এনসিপি ও এবি পার্টি তাতে রাজি হয়নি।

ফলে ঐক্যের আশা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল। গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে নতুন মঞ্চ গড়ার দিকে এগোচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারসহ আরও কয়েকটি দল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *