ইসলামের বিধান এবং মুসলমানদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রতীক দাড়ি-টুপিকে ‘রা’\জা’\কা’\র’ আখ্যা দিয়ে ঘৃণা চর্চার যে প্রবণতা নতুন করে দেখা দিচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam Bangladesh)। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এই অবস্থান স্পষ্ট করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও এমন একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার শুরু হয়েছে, যেখানে ইসলামের বিধান ও মুসলমানদের পরিচয়বাহী দাড়ি-টুপিকে ‘রা’\জা’\কা’\র’-এর প্রতীকে পরিণত করে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এই ঘৃণ্য চর্চা জাতিকে বিভক্ত করছে এবং সামাজিক সহাবস্থানের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। তিনি এসব ঘৃণাজীবী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।
মাওলানা আজিজুল হক বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে মুসলমানি পরিচয়, নাম ও ধর্মীয় চিহ্নকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল। সেই সময়ে ইসলাম নির্মূলের রাজনীতি চালানো হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবীদের শান্তি ও সহাবস্থানের পথ বেছে নেওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী অপশক্তি ও বাম সেকুলার গোষ্ঠী আবারও উৎপাত শুরু করেছে। তারা যদি বিভাজন সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, তবে আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে না—এ কথাও স্পষ্ট করে দেন তিনি।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, কথিত ‘রা’\জা’\কা’\র’ বয়ান ধসে পড়ার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পথ তৈরি হয়েছিল। ভারতীয় বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাখ্যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা জুলাইয়ের নতুন বিপ্লবী প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে। একাত্তরের মহান জনযুদ্ধকে যারা আধিপত্যবাদী শক্তির হাতে তুলে দিয়েছিল, তারা ক্ষমতার লোভে নিজ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সে দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা আমাদের বিজয় দিবস ‘ছিনতাই’ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একাত্তরের রক্তাক্ত জনযুদ্ধ ও বিজয় একান্তই আমাদের, এর মালিকানা অন্য কারও নয়।
বিবৃতির শেষাংশে মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ভারতীয় বয়ানে ‘মুক্তিযুদ্ধ’-এর প্রচারকারীরা মূলত ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের দালাল হিসেবে কাজ করছে। তারা একাত্তরকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যেখানে সেটি প্রায় ব্লাসফেমিতে পরিণত হয়েছে—কোনো বিতর্কিত তথ্য বা সংখ্যার প্রশ্ন তোলাও যেন অপরাধ। তিনি বলেন, একাত্তরের জনযুদ্ধ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সাতচল্লিশের উত্তরসূরি একাত্তর, যেমন একাত্তরের উত্তরসূরি চব্বিশ। সাতচল্লিশ, একাত্তর ও চব্বিশ—এই ধারাবাহিকতাই আমাদের আজাদীর সিলসিলা। এর কোনো একটিকেও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এখন সময় এসেছে সত্য ও নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চার পথে এগিয়ে যাওয়ার।


