হাদিকে হ\ত্যা\ চেষ্টার দিন ভাড়ার গাড়িকে একেকবার একেক জায়গায় যেতে বলেছিলেন ফয়সাল: নুরুজ্জামান

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ১২ ডিসেম্বর ঘটনার দিন একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করেছিলেন। সেই গাড়ির চালককে তিন বার তিন স্থানে আসতে বলেছিলেন তিনি। প্রথমে গাড়িটিকে আসতে বলা হয়েছিল ঢাকার মৎস্য ভবনের সামনে, যে এলাকার কাছেই ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু জুমার নামাজের পর গাড়িটিকে আসতে বলা হয় আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারে। সর্বশেষ ধামরাই উপজেলার কালামপুরে যেতে বলা হয় গাড়িটিকে। সেখান থেকে গাড়িটিতে ওঠে ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন ফয়সাল।

এই গাড়িটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী। হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার ফয়সালকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার নুরুজ্জামান আজ বুধবার আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এসব তথ্য জানান। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলামের আদালত শুনানি শেষে নুরুজ্জামানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁকে আজ ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গাড়ি ভাড়ার সূত্র ধরে ফয়সাল করিমের সঙ্গে পরিচয় হয় বলে দাবি করেন নুরুজ্জামান নোমানী। তাঁর দাবি, গত তিন মাস ফয়সালের সঙ্গে সরাসরি তাঁর দেখা হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি গাড়ি ভাড়া নিতেন।

নুরুজ্জামান বলেন, ‘৯ মাস আগে থেকে গাড়ির ভাড়া নেওয়ার সূত্র ধরে অনলাইনে, হোয়াটসঅ্যাপে ফয়সালের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। আমিতো দিসি ভাড়া। কিন্তু উনি কী করছে, আমি বুঝতেছি না।’

তিনি জানান, ফয়সাল তাঁর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রায়ই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া যেতেন। সেখানে সারা দিন আলাউদ্দিন পার্কে থাকতেন। গত বুধবারও (হাদির ওপর হামলার দুদিন আগে) গাড়ি ভাড়া নিয়ে সাটুরিয়া, আলাউদ্দিন পার্ক গিয়েছিলেন ফয়সাল। ঢাকায় ফিরে নামেন বিএনপি বাজারে, ভাড়া পরিশোধ করেন বিকাশে।

হাদিকে হত্যাচেষ্টার দিনেও ফয়সাল পারিবারিক কারণ দেখিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে চান বলে জানান নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, সেদিন তাঁর সব গাড়ি ট্রিপে থাকায় তিনি ফয়সালকে প্রথমে না করে দিয়েছিলেন। দেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁর বন্ধু সুমনের গাড়ি ব্যবস্থা করে দেন।

নুরুজ্জামান বলেন, ফয়সাল প্রথমে গাড়িটি মৎস্য ভবনের সামনে পাঠিয়ে দিতে বলেন। গাড়ি সেখানে পাঠানো হয়। তার ভাষ্যে তখন ফয়সাল বলেন, ‘ভাই একটু সমস্যা। মৎস্য বাজার (ভবন) যাব না। আপনি জুমার পরপরই বিএনপি বাজারে সামনে গাড়িটা পাঠায়ে দিয়েন।.. পরে বিএনপি বাজারের সামনে আসার পরে দুষ্টু লোকটা বলে, ভাই আমিতো ওখানে থাকব। উনি (চালক) আসছে কি না?… খালি গাড়িটা আপনি কালামপুর পাঠান।’ এরপর নুরুজ্জামান চালক সুমনকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে কালামপুর যেতে বলেন।

বিচারক তখন বলেন, ড্রাইভারকে চিনেন? নুরুজ্জামান বলে,‘ জি’। ড্রাইভার কোথায় আছে জানেন? নুরুজ্জামান বলেন, ‘তাকেও আনা হয়েছে। সে ডিবিতে আছে।’

নুরুজ্জামান আদালতকে বলেন, নয় মাস আগে যখন পরিচয় হয় তখন ফয়সালের চুল বড় ছিল, মুখে ছিল মাস্ক। শনিবার সংবাদপত্রে ছোট চুলের ফয়সালকে দেখে তিনি চিনতে পারেননি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হামলার আগের রাতে ১১ ডিসেম্বর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টে ছিলেন ফয়সাল ও আলমগীর শেখ। ১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে তাঁরা একটি মোটরসাইকেলে ঢাকায় আসেন। হাদিকে গুলি করার পর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় গিয়ে গ্যারেজে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেন তাঁরা। সেখানে অবস্থানের পর একটি অটোরিকশা নিয়ে যান আমিন বাজারে।

আমিনবাজারেই ফয়সাল ও আলমগীর মুঠোফোন ও সিম ফেলে দেন। সূত্রের দাবি, আমিনবাজার থেকে উবারে একটি গাড়ি ভাড়া করে কালামপুর যান তাঁরা। নুরুজ্জামানের ঠিক করে দেওয়া গাড়িটিতে সেখান থেকে ওঠেন তাঁরা। এরপর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে ময়মনসিংহে গিয়ে আরেকটি প্রাইভেটকার নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন তাঁরা। গাড়িটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাঁদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাঁরা ভারতে ঢুকে পড়েন।

হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ জাবের বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পরে মামলাটি ডিবিতে (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা ও অর্থের জোগানদাতা পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *