দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ইতি টেনে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে আলোড়ন। দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের উন্মাদনা। এদিন দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে তারেক রহমানের।
তার দেশে ফেরার দিনে বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে, সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং সেখান থেকে যাবেন নিজের গুলশানের বাসভবনে।
দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, এবার ভাই নয়, ‘নেতা’ হিসেবে ফিরছেন তারেক রহমান। শুধু একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়, বরং এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের নতুন অধ্যায়ও হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি।
সর্বোচ্চ প্রস্তুতি বিএনপির
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় ও সফল করতে রাজধানীজুড়ে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশ থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জমায়েত হতে পারে সংবর্ধনাস্থলে। নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও জনসমাগম—সব দিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি চালাচ্ছে দলটি।
ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সংগঠিতভাবে ঢাকায় আনার জন্য ১০টি রুটে স্পেশাল ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ কারণে ২৫ ডিসেম্বরের জন্য তিনটি ট্রেনের যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে: রাজবাড়ী কমিউটার, ঢালারচর এক্সপ্রেস এবং রোহনপুর কমিউটার।
তবে শুধু দলের পক্ষ থেকেই নয়, সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তুতি। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের যাত্রাপথে থাকবে নিরাপত্তা বেষ্টনী, সোয়াট টিম, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও দায়িত্বে থাকবেন।
তার নিরাপত্তা তদারকির জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে। চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা বাহিনীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা টিমও কাজ করছে সমন্বিতভাবে।
দেশে ফিরছেন, কিন্তু লন্ডনের ঠিকানা ছাড়ছেন না
পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে ফিরলেও আপাতত লন্ডনের বাড়ি ছাড়ছেন না। ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর দুই কন্যা আগেভাগেই ঢাকায় পৌঁছে যাবেন। একই ফ্লাইটে তার সঙ্গে ফিরছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা জারনাজ রহমান, মিডিয়া টিম প্রধান আবু আবদুল্লাহ সালেহ, পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আব্দুর রহমান সানি ও তাবাসসুম ফারহানা।
বিএনপির মিডিয়া টিমের প্রধান সালেহ জানিয়েছেন, “সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা।” তারেক রহমানের টিকিট বুক করা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২০ ফ্লাইটে। এটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার, যেটি হিথ্রো থেকে ঢাকায় নামবে ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে।
গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠছেন তারেক
তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে অনেকেই বিএনপির রাজনীতির জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। দলের নেতারা বলছেন, তার আগমন নতুন শক্তি ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক এবং দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন জানিয়েছেন, “তাঁর আগমন ঘিরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। এটি হবে ইতিহাসের একটি স্মরণীয় সংবর্ধনা।”
সংবর্ধনা আয়োজন এবং আনুষ্ঠানিক অনুমতি
রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় যে গণসংবর্ধনা হবে, তার জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। গত রবিবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে অনুমতিপত্র পাঠিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
সংবর্ধনার জন্য মঞ্চ তৈরি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা মঞ্চ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ ও ভোটার হওয়া
গত সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির প্রতিনিধিদল। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “তারেক রহমান বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন এবং শনিবার ভোটার হওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন।”
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে লিখিতভাবে আপত্তি জানানো হয়েছে। ফৌজদারি মামলার তথ্য সংক্রান্ত অতিরিক্ত কাগজপত্র চাওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দলটি।
জিয়ার মাজার জিয়ারত
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেরার পরদিন বা তার পরের দিন তারেক রহমান যাবেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে। এটি হবে তার প্রত্যাবর্তনের একটি প্রতীকী মুহূর্ত।
স্বতঃস্ফূর্ত জনতার ঢল, ইতিহাসের অংশ হতে চলেছে বিএনপি
সব প্রস্তুতি ও আবেগ মিলিয়ে বলা যায়, ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির জন্য একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। দলীয় অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, প্রতিদিন প্রস্তুতি সভা হচ্ছে এবং একে স্মরণীয় করে তুলতেই সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নিচের রুটগুলোতে স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে:
– কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার
– জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর
– টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল
– ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার
– জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর
– পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়
– খুলনা-ঢাকা-খুলনা
– চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর
– রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী
– যশোর-ঢাকা-যশোর
এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য ট্রেনেও অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।


