চরমোনাইর দাবি ১৫০ আসন : আসন সমঝোতা নিয়ে বিপাকে জামায়াত

একক প্রার্থী দিয়ে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার পরিকল্পনায় থাকা আট দল এখনো নিজেদের ‘জোট’ বলে না উল্লেখ করলেও, বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। আসন ভাগাভাগি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তীব্র আকার নিচ্ছে। বিশেষ করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh)–এর ১৫০ আসনের চাওয়াকে কেন্দ্র করে চাপে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)

সূত্র বলছে, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় তিনটি বিভাগের আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বারবার বলা হচ্ছে, সমঝোতা ‘দুই-তিন দিনের মধ্যে’ হয়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

চরমোনাইর বড় দাবি
আট দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের চাওয়া সবচেয়ে বেশি—প্রথমে ১৫০ আসনের তালিকা দিলেও, এখন অন্তত ১২০ আসনের দাবি করছে তারা। দলটি কখনো সংসদে যেতে না পারলেও, বড় অংশ চাইছে নির্বাচনী সমঝোতায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটির ভোট ছিল মাত্র ০.৯৪%। অন্যদিকে জামায়াতের অতীত ভোটব্যাংক অনেক বড় হলেও এবার সঙ্কোচনের মুখে পড়েছে চাহিদাগুলো।

জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ‘আসন ছাড়ার বিষয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু শরিকরা এমন সব আসনে প্রার্থী হতে চায়, যেখানে তাদের ভিত্তি দুর্বল। সেখানে তাদের প্রার্থী হলে পরাজয় নিশ্চিত।’

তারা আরও জানিয়েছেন, কিছু আসনে বিএনপি থেকে আসা নেতারা শরিকদের হয়ে প্রার্থী হতে চাইছেন, যা জামায়াতের কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে আসা, এবং অতীতে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা থাকা কয়েকজন নেতা এখন ইসলামী আন্দোলনের হয়ে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন—এতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

সমন্বয়হীন দাবির চাপে জামায়াত
ইসলামী আন্দোলনের বাইরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish) ৫০ আসন, খেলাফত মজলিস ৩০, খেলাফত আন্দোলন ২৫ আসন চাচ্ছে। জা’\গ’\পা ও বিডিপি–সহ শরিকদের সম্মিলিত দাবি ২৭০ আসনের বেশি। জামায়াত এত আসন ছাড়তে রাজি নয়।

গত অক্টোবরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছিলেন, শরিকদের ১০০ আসন ছাড়া হবে। এখন দলটি এই বক্তব্যকে ‘অনানুষ্ঠানিক’ বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। দলটির অভ্যন্তরীণ জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যোগ্য অবস্থানে আছে জামায়াত। তাই বেহিসাবি আসন ছাড়লে নির্বাচনে আর লড়াই থাকবে না—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ পেয়েছে।

খেলাফত মজলিসের অবস্থান
৫০ আসন চাওয়া খেলাফত মজলিস প্রত্যেক জেলায় একজন করে প্রার্থী দিতে চায়। যদিও একাধিক নেতা বলেছেন, ২৫ আসনের কমে তারা রাজি হবেন না। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক (Maulana Mamunul Haque) নিজেই ঢাকা-১৩ থেকে প্রার্থী হতে চান আট দলের পক্ষে।

দলের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের এর আগে ২০১৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসনে ধা’\নের শী’\ষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন। এবারও তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু জামায়াত সেখানে ওলিউল্লাহ নোমান (Oliullah Noman)–কে দাঁ’\রি’\পা’\ল্লা প্রতীকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর কাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছেন।

সাবেক জাপা নেতাদের নিয়ে বিতর্ক
আট দলের শরিক ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন একাধিক সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারি মো. হাবিবুল্লাহ বেলালী (Qari Mohammad Habibullah Belali), যিনি রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ এবং একাধিকবার জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়ে এখন ময়মনসিংহ-১০ থেকে প্রার্থী হতে চান।

জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি জামায়াতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নেয়া হয়নি। এখন তিনি ইসলামী আন্দোলনের হয়ে আট দলের প্রার্থী হতে চান। এ নিয়ে তীব্র অস্বস্তি রয়েছে।

আরেক সাবেক জাপা নেতা গোলাম মসিহ (Golam Mosih), যিনি ২০১৫ থেকে সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তিনিও ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রার্থী করতে চায় দলটি।

সমন্বয়করা বলছেন, আলোচনা চলছে
আট দলের সমন্বয়ক এবং জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ (Hamidur Rahman Azad) জানিয়েছেন, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার আগেই ৩০০ আসনে একক প্রার্থী ঠিক করা হবে।

তবে অনেকেই মনে করছেন, শরিকদের ‘অবাস্তব’ চাহিদা ও অতীত রাজনীতির প্রেক্ষাপট এই সমঝোতার পথ কঠিন করে তুলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *