ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে নিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party – NCP)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দ্য ডেইলি স্টারের আয়োজনে শুরু হওয়া ‘স্টার নির্বাচনী সংলাপ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
নাহিদ বলেন, “এই ভোটগুলো নিশ্চিত করতে তারা কিছু লক্ষণ দেখাচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগের লোকজনকে) বলছে, মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে।”
আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি বা অন্যান্য দলে যোগ দিচ্ছেন—এমন ইঙ্গিত দিয়ে নাহিদ কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনের একটি সাম্প্রতিক ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “দেবিদ্বারে গণমাধ্যম ও পুলিশ সুপারের সামনে বড় আয়োজন করে ২০০ জন আওয়ামী লীগের লোক বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। এটা শুধু একটি উদাহরণ। আমরা এমন আরও অনেক ঘটনা দেখছি।”
এ সময় তিনি জানান, ওই আসন থেকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ নির্বাচন করবেন।
ফ্যাসিবাদ-সংক্রান্ত প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “ফ্যাসিবাদী দলকে যারা সমর্থন করেছে আর যারা হ’\ত্যা বা স’\ন্ত্রা’\সে জড়িত—এই দুই শ্রেণির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে হবে। ফ্যাসিবাদী দলকে সমর্থন করা নৈতিক অপরাধ, তারা ক্ষমা চাইলে সমাজে পুনর্বাসিত হতে পারে। কিন্তু যারা গ’\ণ’\হ’\ত্যা’\য় জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ট্রুথ কমিশনের মাধ্যমে “আওয়ামী লীগ প্রশ্ন” সমাধান না হওয়ায় দেশ এখনো ভুগছে।
এর আগে একজন দর্শক প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো নির্দিষ্ট দলে যোগ দিচ্ছেন কি না এবং তা ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না।
প্রতিউত্তরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের দলে এমন উদাহরণ আপনি খুঁজে পাবেন না। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়াই করেছি। আমরা এতটা দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছাইনি যে ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদও এ অভিযোগ নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “আমাদের দলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এত রক্ত ও জীবন দেওয়ার পর ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না।” তিনি এই অভিযোগের জন্য “হলুদ সাংবাদিকতা”কে দায়ী করেন। তবে কেউ নির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারলে সে বিষয়ে দল ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) (Communist Party of Bangladesh – CPB)-র প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (Mujahidul Islam Selim) বলেন, “অনুপ্রবেশ” নিয়ে তর্ক অর্থহীন, কারণ এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক পালাবদলের এ সময়টিতে দলবদল ও ভোটব্যাংককে ঘিরে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলেছে নাহিদ ইসলামের এই মন্তব্য।


