দেশজুড়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি (BNP)–তে মনোনয়নপ্রাপ্তি নিয়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্তত ৫০টির মতো আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বিএনপির জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম-১২: চাপের মুখে মনোনয়ন সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম-১২ আসনে এক সময় দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে রয়েছে বিএনপি। একই আসনে দলের কেন্দ্রীয় সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ (Awami League) আমলে গুম হওয়া সৈয়দ সাদাত আহমেদ আজ মনোনয়ন জমা দেবেন বলে জানা গেছে।
নাটোর-১: মনোনয়ন পেয়েছেন ফারজানা, টিপুর হুঁশিয়ারি
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের কন্যা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। তবে একই আসনে কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি আশা করছি শেষ মুহূর্তে দল মনোনয়ন দেবে। তবে না দিলেও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। ইতোমধ্যে ভোটারদের মাঝে ঘুরছি, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।”
নোয়াখালী-৫: উকিল নোটিশ ও বিকল্প প্রস্তুতি
নোয়াখালী-৫ আসনে ফকরুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাবুর মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)-এর বরাবর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, দল প্রার্থী না বদলালে কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর করিম চৌধুরী আবেদ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন।
ঢাকা-১২: আসন বদলের প্রতিবাদে নিরবের সিদ্ধান্ত
ঢাকা-১২ আসনে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরবকে। কিন্তু পরে সেই মনোনয়ন পরিবর্তন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে নিরবও স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৮: পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীন
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি নুরুল কবির শাহীন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে লুৎফুল্লাহেল মাজেদকে।
পটুয়াখালী ও ঝিনাইদহেও স্বতন্ত্র পথে বিএনপি নেতারা
পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদ (Gonodhikar Parishad) নেতা নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন আগেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খানের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার আগেই ঝিনাইদহ-২ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা জানান। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
বিস্তৃত প্রেক্ষাপট: ৫০টিরও বেশি আসনে প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম, নাটোর, নোয়াখালী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ছাড়াও কুষ্টিয়া-৪, জামালপুর-২, দিনাজপুর-২–সহ অন্তত ৫০টিরও বেশি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের সাথে মিলিত হয়ে এই কোন্দল নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেও সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।


