তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, নাশকতা, গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৮৪টি মামলা করা হয়।
ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে ৬২টির মতো মানহানির মামলা রয়েছে বলে জানান তার আইনজীবীরা। ৮৪ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন, কোনো মামলা বাতিল করা হয়েছে। আবার কোনো মামলায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি মামলায় সাজা হয়, তার মধ্যে একটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন এবং একটিতে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। বাকি তিনটি মামলা বিচারাধীন। মূলত এই মামলা গুলোর নিষ্পত্তি উপর নির্ভর করে তার দেশে ফেরা। দলীয় সূত্র বলছে, কোনো অনুকম্পা বা নির্বাহী আদেশ নয়, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো মোকাবিলা করতে চান তারেক রহমান। এ জন্য তাঁর পক্ষে একটি শক্তিশালী আইনজীবী প্যানেল কাজ করছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলায় মুক্ত হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা : বহুল আলোচিত ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
মানিলন্ডারিং মামলা: বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের হওয়া এক মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। তবে ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু তারেক রহমানকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের ৭ বছরের দণ্ড স্থগিত ঘোষণা করে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা : মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। এই মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা ইতিমধ্যেই স্থগিত করেছেন আদালত। তবে এই মামলায় তারেক রহমানেই ১০ বছরের সাজা এখনো বলবৎ আছে। তবে শুনানিতে দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান ইতিমধ্যেই আদালতকে জানিয়েছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কোনো অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। তিনি বলেন, এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে অর্থ গেলেও এখানে আত্মসাতের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোন টাকা ব্যয় হয়নি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন: জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।
মানহানির মামলা: লন্ডনে ২০১৪ সালে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার ও পাকবন্ধু উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ ওঠে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে নড়াইলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।