গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খরচ দেখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিস্ময়

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা দিতে একটি ‘বিশেষ সেল’ গঠন করেছে। গত ২৭ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ গঠনের কথা জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

দেড় মাসে এই সেল কেনাকাটায় খরচ করেছে ৪৪ লাখ টাকারও বেশি। এছাড়া গ্রাফিতি বইসহ ডকুমেন্টারির জন্য আরও ২ কোটির বেশি টাকা। তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেন তিনি।

গত ২ ডিসেম্বর বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সেলের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এমন নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত এই সেলের সদস্য ১০ জন। এই সেলের দলনেতা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। গত ২৭ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস আদেশে বলা হয়— ‘‘জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা দিতে গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় এ ‘গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ গঠন করা হলো। সেলে উপসচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের চার জন কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দুজন, ছাত্র প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন ও সিনথিয়া জাহিন আয়েশা এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পিআইডির একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।’’

বিশেষ সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়, ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংগৃহীত তালিকার ধারাবাহিকতায় অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তালিকা বিবেচনায় নিয়ে যাচাই-বাছাইপূর্বক তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশেষ সেল শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত করতে সম্ভাব্য সব উৎস থেকে নতুন তথ্যাদি সংগ্রহ করার উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে এবং প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে যাবে ও স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সহায়তা গ্রহণ করবে।’

অফিস আদেশে আরও বলা হয়, ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের হাসপাতালে সুচিকিৎসা পেতে এবং শহীদ ও আহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া ছাড়াও গুরুতর আহতদের প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে সহায়তা করবে এ সেল।’

এছাড়া বিশেষ সেল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এ জন্য তথ্যানুসন্ধান ও ডকুমেন্টেশনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের ছবি, ভিডিও, বক্তব্য, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধ, রিপোর্ট সংগ্রহ করবে। ক্লাউড সোর্স থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই এবং সংরক্ষণ করবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করবে বলে অফিস আদেশে জানানো হয়েছে।

‘বিশেষ সেল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি তথা তথ্যচিত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য যাচাই করে ব্যবস্থা নেবে এবং ভুল তথ্যের বিষয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে।’

সেলের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় অর্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সময়ে সময়ে ন্যস্ত অর্থ বিভাগের মঞ্জুরি থেকে নির্বাহ হবে। অর্থ বিভাগ এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বিশেষ সেলের কার্যক্রম নিয়মিত তত্ত্বাবধান করবেন বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২ ডিসেম্বর এই সেলের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সভায় সেলের খরচ সম্পর্কে জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়—সেদিন (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ফার্নিচার ও ইন্টেরিয়র, কম্পিউটার, অফিস সরঞ্জাম, স্টেশনারি, আপ্যায়ন ও জ্বালানি বাবদ ৪৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। এছাড়া গ্রাফিতি বইসহ ডকুমেন্টারির জন্য আরও ২ কোটির বেশি টাকা খরচ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশেষ সেলকে দুই দফায় ১০ কোটি টাকা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশেষ সেলের যাবতীয় ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে সেলের অন্য সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনও ধরনের কেনাকাটা করা যাবে না। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত ব্যয় করা অর্থ যাচাই করার জন্য অডিট কমিটি করারও সিদ্ধান্ত হয়।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এ সময় উপদেষ্টা বিস্ময় প্রকাশ করে খরচ করার ক্ষেত্রে রিকুইজিশন, প্রাক অনুমোদনসহ যাবতীয় খরচের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে কঠোর নির্দেশ দেন। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ রাখতে বলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *