প্রথমে না যাওয়ার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে অংশ নিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের সাড়ে পাঁচ মাস পর রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।
বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য যাতে ফাটল না ধরে সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়েছি।’
ফ্যাসবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখা সবচেয়ে জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেটিকে গণঐক্যে রূপান্তরিত করে রাজনৈতিকভাবে আমরা যেন সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি এবং সেই ঐক্যকে ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেটাই আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
‘সেই প্রচেষ্টার কারণে আমরা সকল রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক যেকোনো বক্তব্য আমরা দিতে চাই। এখন ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং ফ্যাসিবাদী দোসররা যেকোনো রকমের অনৈক্যের বীজ যেন আমাদের ভিতরে বপন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান করেছিলেন, আমরা এসেছি, কথা বলেছি। আমাদের পরামর্শ যা দরকার রাষ্ট্র পরিচালনা হিসেবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে সেটা আমরা দিয়েছি।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো পরামর্শ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন।’
‘আমরা প্রশ্ন করেছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সাড়ে ৫ মাস পরে কোনো প্রয়োজন ছিলো কি না? যদি থেকে থাকে সেটার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কি? সেটা নির্ধারণ করতে হবে।’
এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যে যেন কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে জোর দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যদি কোনো রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয় সেই দলিলটাকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু সেটা প্রণয়ন করতে গিয়ে যেন সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের পরামর্শ নেওয়া হয় সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি।
‘আমি প্রধান উপদেষ্টা ও সকল উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, সেই বিষয়ে যেন আপনারা নজর রাখেন এবং সেই হিসেবে যেন পদক্ষেপ নেন। যাতে করে জাতীয় ঐক্যে কোনো ধরণের ফাটল সৃষ্টি না হয়, আমাদের মধ্যে যেন কোনো ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি ছিলো জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলিল প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ে।’ খসড়া নিয়ে কোনো আপত্তি আছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য কোনো মন্তব্য করেননি।
সর্বদলীয় এ বৈঠকে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর; আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ; জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও সংগঠনটির মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
এছাড়া বৈঠকে অংশ নেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে তিন সদস্য; ইসলামি আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দুই সদস্য; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও জাতীয় গণফ্রন্টের কামরুজ্জামান।