বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৭

রাজধানী ঢাকার বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নারীসহ ৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমরান সরকার (২১), তেজগাঁও কলেজে জান্নাতুল মিম (২২), আবরার (২২), আলামিন (২৫), আফসার উদ্দিন (২৫), কবি নজরুল কলেজের ছাত্র আসিফ (২৪) ও ডেমরা বড় মাদ্রাসার ছাত্র মাসুদ (২৪)। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আলামিন গণমাধ্যমকে জানান, যাত্রাবাড়ী জোনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা ছিল। সে সময় সমন্বয়কদের সামনেই আমাদের একজন সহযোদ্ধার ওপর হামলা চালানো হয়। সে বিষয়ে আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কথা বলতে এলে আমাদের ওপরে হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, বাংলামোটর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় জরুরি বিভাগে এসেছে। তাদের সবার চিকিৎসা চলছে।

এ ঘটনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপৎগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকে। একসময় তারা জোর-জবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে অফিস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদীন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবি-দাওয়া শুনতে চান। কিন্তু তারা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরেও চড়াও হন। এ সময় নির্বাহী সদস্য নাদিম আবেদিন এতে আহত হন। পরবর্তীতে অন্যান্য নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগমন করলে পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীদের কার্যালয় ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (দপ্তর সেল) জাহিদ আহসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহিংসতার বদলে সৌন্দর্য এবং সম্প্রীতির বিকাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাথেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, সাংগঠনিক সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আলোচনার বদলে যারা সহিংসতার পথ বেছে নেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বিষয়ে বিন্দুমাত্রা সহানুভূতি প্রদর্শন করবে না।

এতে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম। সেহেতু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সারা দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষাও বেশি। আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাদের অনুভূতির বিষয়ে পরিপূর্ণ সজাগ। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের জন্য বদ্ধপরিকর। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সহিংসতার বদলে সংহতি এবং সম্প্রীতি প্রাধান্য পাবে।

সবশেষে বলা হয়, আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী থাকলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিক পরিসরে যুক্ত নয়। ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল এবং ঘটনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজে নিয়োজিত আছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *