নির্বাচনের আগে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রাখা। কিন্তু সরকারে এমন কাউকে রাখলে যারা নিজেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব হবে না – বিবিসি বাংলার সাথে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তাজাখবরের পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ:
‘দীর্ঘ সংস্কার নয়, দ্রুত নির্বাচনের দাবি
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, “সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা নিজেরাও ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু যা করতে ১০ বছর লেগে যেতে পারে, সেইসব সংস্কার শেষ করে তারপর নির্বাচন—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি মনে করেন, সাংবিধানিক বা কাঠামোগত বড় পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচিত সংসদই সেই ক্ষমতা বহন করে। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে দাবি করেন তিনি।
ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ও সরকারের নিরপেক্ষতা
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এবং সরকারে প্রতিনিধি রাখার ইচ্ছার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল জানান, “যদি তারা মনে করে সরকারে থেকেও নির্বাচনে যাবে, সেটি কোনো দলই মেনে নেবে না।” তিনি বলেন, বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে বিএনপির কোনো প্রশ্ন নেই, কিন্তু ভবিষ্যতে সরকার গঠন বা সম্প্রসারণের সময় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে সংকট তৈরি হতে পারে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে সম্প্রতি ওঠা বিতর্ক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। এটা সম্পূর্ণ জনগণের বিষয়। ভোটের মাধ্যমে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে থাকবে, কে থাকবে না।” তিনি স্পষ্ট করেন, “যারা স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আছে, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, সে সিদ্ধান্ত দল নয়, জনগণই নেবে।”
আন্দোলন ও একাত্তরের গুরুত্ব
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রদের দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল জানান, সেই ইস্যুতে আগে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, “একাত্তর আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। একে পেছনে ফেলার চেষ্টা আমরা সমর্থন করি না।” তিনি মনে করেন, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পরবর্তী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্ব স্বীকার করেই সামনের পথ নির্ধারণ করতে হবে।
‘অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে এখনো সহযোগিতা করছে বিএনপি
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কোনো ভুল-ত্রুটি দেখলে সেটা সরকারকে জানাচ্ছি। এখনো কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়নি।” তবে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, এ সহায়তার মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা পাওয়া।