আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীতো দূরের কথা শেখ হাসিনার অনেক কাছের লোকও হয়তো টের পাননি যে মাত্র ৪৫ মিনিটের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হবে। শেখ হাসিনা যখন হেলিকপ্টারে করে পালাচ্ছেন তখনও মানুষ মারতে মরিয়া আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৬ বছরের অপকর্মের বোঝা কাঁধে নিয়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে দলটি।
সেই আওয়ামী লীগ আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে চায়। আদৌ কী সম্ভব কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এবার আর তাদের পুনরুত্থান সহজ হবে না। ‘৭১ পরবর্তী তাদের ৪ বছরের কুকর্মের ফল ভোগ করতে দুই দশক ধরে। আর এবারের ১৬ বছরের দুর্নীতি-গুম-খুন-বিনা ভোটের নির্বাচন- রাতের ভোটার নির্বাচন দলটিকে অনেকটাই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। সেই কালিমা মুছে মাঠে ফেরত আসাটা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
সম্প্রতি কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং রাজনীতি বিশ্লেষক আলী রিয়াজ। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করেছেন।
সেগুলো হলো-
১. অপরাধের দায় স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা – দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামল এবং বিশেষ করে ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার জন্য দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
২. দলীয় মতাদর্শে পরিবর্তন – আওয়ামী লীগকে তাদের পুরনো রাজনৈতিক নীতিগুলো পরিত্যাগ করে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
৩. শেখ হাসিনার পরিবার থেকে নেতৃত্ব সরিয়ে দেওয়া – শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের কোনো সদস্য নেতৃত্বে না থাকলে দল পুনর্গঠনের সুযোগ পেতে পারে।
৪. নৃশংস অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা – মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অতীতে সংঘটিত সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আলী রিয়াজ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান। তিনি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐক্যমত্য গড়ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় যেসব ব্যক্তি গণহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী, তাদের বিচার হতে হবে, যার মধ্যে শেখ হাসিনাও অন্তর্ভুক্ত। এই শর্তগুলো পূরণ হলে তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।’
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজেদের অবস্থান পর্যালোচনা করা এবং রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য নতুন কৌশল নির্ধারণ করা। তবে শর্তগুলো পূরণ না করলে তাদের প্রত্যাবর্তন কঠিন হবে।