বিএনপিতে তিনজন মহাসচিব নিয়োগের প্রস্তুতি

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি (BNP)-তে বড় ধরনের সাংগঠনিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দলের নেতৃত্বে তিনজন মহাসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, একজন হবেন সাংগঠনিক বিষয়ক মহাসচিব, অন্যজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক মহাসচিব এবং তৃতীয়জন দায়িত্ব পালন করবেন প্রশাসনিক বিষয়ক মহাসচিব হিসেবে।

দলের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে অথবা চেয়ারপারসনের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতা বলে এ নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাঠামোতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে কো-চেয়ারম্যান পদ যুক্ত করার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে তা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হবে।

সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারেক রহমান

দলীয় হাইকমান্ড, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman), সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন। জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় শরিক দলগুলোর নেতাদের মূল্যায়নের বিষয়েও আলোচনা চলছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর নেতাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, মনোনয়ন ও মন্ত্রিত্বে কারা থাকবেন, তা নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের পারফরম্যান্স ও দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে। ইতোমধ্যে দলের সব নেতার রিপোর্ট হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে।

চাঁদাবাজি ও বেইমানির অভিযোগে কঠোর অবস্থান

বিশেষ করে যারা চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন কিংবা বিগত সরকারে আঁতাত করে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তাদের বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তারেক রহমান। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মতো চাটুকার প্রকৃতির কাউকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বরং নতুন মুখ ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।


ত্যাগী নেতাদের বড় পদে মূল্যায়ন শুরু

তারেক রহমান ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন ইউনিটে ত্যাগী নেতাদের বড় বড় পদে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন। সদ্য বিদায়ী যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগম (Nargis Begum)-কে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি যশোরসহ দলের দুর্দিনে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসিন (Aminur Rashid Yasin)-কে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির আরও ত্যাগী নেতাদের বড় পদে মূল্যায়ন করা হবে।


তরুণ নেতৃত্বে অগ্রাধিকার

সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সব স্তরে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলা কমিটি থেকে শুরু করে জাতীয় স্থায়ী কমিটি পর্যন্ত ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের বেশি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক (Aminul Haque)-কে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক এবং রফিকুল আলম মজনু (Rafiqul Alam Majnu)-কে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে।


জাইমা রহমানের সক্রিয় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা

তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান (Zaima Rahman) সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন বলে আভাস মিলেছে। ইতোমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ‘ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার’ অনুষ্ঠানে দলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। ভবিষ্যতে সাংগঠনিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি।


ঢাকা মহানগর বিএনপিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক (Aminul Haque) কে এবং মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে রফিকুল আলম মজনু (Rafiqul Alam Majnu) কে।

নেতাদের মন্তব্য

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (Iqbal Hasan Mahmud Tuku) বলেন, “নতুনদের স্থান করে দেওয়া পুরোনোদের কর্তব্য। নতুন-পুরোনোর সমন্বয়েই বিএনপির কমিটি হচ্ছে।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ (Ruhul Kabir Rizvi Ahmed) জানান, তরুণদের নেতৃত্বে আসার পথ উন্মুক্ত রাখা উচিত এবং তাদের সুযোগ বাড়ানো প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ (Advocate Abdus Salam Azad) বলেন, তারেক রহমানের প্রচেষ্টায় বিএনপি আজ ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে।সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *