ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তবে, বহিষ্কৃতদের তালিকায় কোনো ছাত্রলীগ নেত্রী না থাকায় এবং প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দেওয়ায় সমালোচনা উঠেছে।
তদন্ত কমিটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (Anti-Discrimination Student Movement) অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশীদ অভিযোগ করেছেন যে, তদন্ত কমিটি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে তালিকা তৈরি করেছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন—
“ছাত্রলীগের চিহ্নিত মাথাগুলোকে বাদ দিয়ে ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ সেশনের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে তালিকাটি বড় করা হয়েছে। সৈকত, আবু ইউনুস, আকিব ফুয়াদ, কামাল উদ্দিন রানার মতো ছাত্রলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম নেই। এমনকি একজন নারী ছাত্রলীগ নেত্রীও বহিষ্কৃত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “শহীদুল্লাহ হলকে রণক্ষেত্র বানানো হয়েছিল, অথচ মাত্র একজনের নাম এসেছে তালিকায়। তদন্ত কমিটিতে কারা ছিল এবং তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই বেঈমানি করল, তা জানা প্রয়োজন।”
ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ
এর আগে, এক অন্য ফেসবুক পোস্টে রিফাত রশীদ অভিযোগ করেন যে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের (Tanvir Hasan Saikat) নাম তালিকায় নেই।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“ঢাবির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী তানভীর হাসান সৈকতের নাম নেই, আবু ইউনুসের নামও নেই। আমার বোনদের যারা ভিসি চত্বরে পিটিয়েছিল, তাদের নাম নেই। প্রলয় গ্যাংয়ের একাধিক সন্ত্রাসীর নামও বাদ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন—
“সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নারী ছাত্রলীগারকেও বহিষ্কার করেনি। অথচ নির্যাতনের মাত্রা হিসেব করলে তারা পুরুষ ছাত্রলীগের চেয়েও ভয়ংকর ছিল। নারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে?”
প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি
রিফাত রশীদ আরও বলেন,
“আমরা জানতে চাই, এই বহিষ্কারের তালিকা তৈরির সিন্ডিকেটে কারা ছিল। কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় আছে? আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তানভীর হাসান সৈকত নিজেই বসে এই তালিকা বানিয়েছে। অবিলম্বে সব হামলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে বহিষ্কার করতে হবে, না হলে প্রশাসনকে এর ফল ভুগতে হবে।”
প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলে বহিষ্কৃতদের তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন—
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এত সময় নিয়ে তদন্ত করে মাত্র ১২৮ জনকে বহিষ্কার করল! অথচ হামলাকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০০। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগে ঢুকেও হামলা চালিয়েছে। এত প্রমাণ, ছবি, ভিডিও থাকার পরও কেন তাদের বহিষ্কার করা হয়নি?”
বহিষ্কৃতদের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী
এদিকে, বহিষ্কৃতদের তালিকায় দুইজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jagannath University) শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতার নাম রয়েছে।
তালিকায়—
- ৮২ নম্বরে রয়েছেন ইব্রাহিম সানিম, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি।
- ১২১ নম্বরে রয়েছেন মাহমুদুল হাসান আকাশ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি।