ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল (Sarail) উপজেলার চানমনি পাড়া গ্রামে এক নারীর দিকে ‘তাকানো’কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুই গ্রামের মধ্যে, যা পরিণত হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত হয়েছেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এবং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল হাসানসহ অন্তত ২০ জন।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এই সহিংস ঘটনার পেছনে রয়েছে পূর্বের এক বিবাদ এবং সামাজিক টানাপোড়েন। স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, মৃত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালেমা বেগম তার ছেলে সাইফুল ইসলামকে নিয়ে হালুয়াপাড়া গ্রাম হয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন মোগলটুলা গ্রামের মহব্বত আলীর ছেলে তৌহিদুল ইসলাম হালেমার দিকে ‘অশোভন’ভাবে তাকায় বলে অভিযোগ ওঠে। হালেমা বেগম এর প্রতিবাদ করলে প্রথমে কথাকাটাকাটি এবং পরে তার ছেলে সাইফুলের সঙ্গে তৌহিদুলের মারামারি হয়।
রাতেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। তৌহিদুলের পক্ষ নিয়ে মোগলটুলা গ্রামের বহু মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চানমনি পাড়ায় সাইফুলদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখনই শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে।
সংঘর্ষ থামাতে সরেজমিনে উপস্থিত হন ইউএনও মোশাররফ হোসেন এবং ওসি মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে তারাও সংঘর্ষে আহত হন। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তপন সরকার (Tapon Sarker), সরাইল সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, কয়েক মাস আগে এই দুই গ্রামের মধ্যে মোবাইল ফোনের চার্জার নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই রেষ থেকেই পুরনো দ্বন্দ্ব নতুন করে জ্বলে ওঠে। তবে বুধবারের ঘটনার নেতৃত্বে কারা ছিল, তা এখনো তদন্তাধীন।
তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষের পর অনেকেই এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, সামাজিক শিষ্টাচারের অভাব ও পুরনো বিরোধ কতটা বিস্ফোরক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। প্রশাসনের কড়া অবস্থান সত্ত্বেও এই সংঘর্ষ প্রশাসনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।